বরগুনায় ইউপি নির্বাচনে ভোটারদের টাকা দিতে বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে হত্যা
বরগুনার আমতলী উপজেলা সদরে ছুরিকাঘাতে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। আমতলী সদর ইউনিয়নের পূর্ব মহিষডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে অনিল সাজ্জাল বাড়ির সামনে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম হিরণ গাজী (৫০)। ২৮ এপ্রিল আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোতাহার উদ্দিন মৃধার সমর্থক ছিলেন হিরণ গাজী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোতাহার মৃধার সমর্থক মিলন সরদার ও দেলোয়ার সরদারের অভিযোগ, তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবুল বাশার ওরফে নয়ন মৃধার সমর্থকেরা ভোটারদের টাকা দিচ্ছিলেন। তাঁদের বাধা দিতে গেলে ছুরিকাঘাত করা হয় হিরণকে। পুলিশ নিহত হিরণের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমতলী সদর ইউপি নির্বাচনে ৯ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বুধবার রাত ১১টার দিকে আবুল বাশারের সমর্থক ইউসুফ, কাদের সরদার, শহীদ মালাকারসহ ৪০-৪৫ জন পূর্ব মহিষডাঙ্গা গ্রামে ভোটারদের টাকা দিচ্ছিলেন। এ সময় মোতাহার উদ্দিনের সমর্থক হিরণসহ ১০ থেকে ১২ জন টাকা দিতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আবুল বাশারের সমর্থকেরা। একপর্যায়ে ইউসুফ মাতুব্বর, কাদের সরদার ও শহীদ মালাকারসহ ছয়-সাতজন হিরণকে ছুরিকাঘাত করেন। হিরণের সহযোগীরা তাৎক্ষণিক তাঁকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক হিরণকে মৃত ঘোষণা করেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার বলেন, হিরণকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। রাতেই পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে নির্বাচনকে কাজে লাগিয়ে আবুল সরদারের ছেলে কাদের সরদার ও তাঁর লোকজন হিরণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন। একই দাবি চেয়ারম্যান প্রার্থী মোতাহার উদ্দিনের।
নিহত হিরণ গাজীর স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘আবুল বাশার নয়ন মৃধার সমর্থকেরা আমার স্বামীকে ছুরি দিয়ে হত্যা করেছেন। তাঁরা ভোটারদের টাকা দিচ্ছিলেন। এতে বাধা দেওয়ার কারণে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল বাশার বলেন, ‘আমি গতকাল আমার ব্যবসার কাজে বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিলাম। মোতাহার মৃধা ও তাঁর লোকজন দিয়েই হিরণকে হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর দায় চাপাচ্ছেন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’
আজ দুপুরে বরগুনার পুলিশ সুপার আবদুস ছালাম, সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ও আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভোটারদের টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হিরণ গাজী নামের একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।