‘গরিবের হাটে’ এক দিনে ৩০-৩৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি
রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মো. রফিক। ফুটপাতে দোকানগুলোতে মানুষের জটলা দেখে থামলেন। অনেক কাপড় দেখে নিজের দুই মেয়ের জন্য শীতের দুটি পোশাক নিলেন। দাম ১৫০ টাকা। রফিক জানালেন, এ ধরনের পোশাক মার্কেটে ৪০০-৫০০ টাকার নিচে পাওয়া যাবে না। গরিব মানুষের জন্য ফুটপাতই ভরসা।
রাজশাহীর কুমারপাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ফুটপাত থেকে আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রফিক দুই মেয়ের জন্য কাপড় কেনেন। এখান থেকে শুরু করে একেবারে সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে ফুটপাতে কাপড়ের দোকান বসেছে। দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ক্রেতাদের। রাস্তার উত্তর পাশের তুলনায় দক্ষিণ পাশের ফুটপাত ও রাস্তার ধারে বেশি দোকান। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার বেশি দামের কাপড় ও শীতের কম্বল কেনা যাচ্ছে।
ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সপ্তাহের এক দিন শুক্রবারে শুধু এই হাট বসে। এক দিনে এখানে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়। তাঁদের কাছে এটি ‘গরিবের হাট’ হিসেবে পরিচিত। মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ছেলেমেয়ে, ছোট-বড় সবার কাপড়ই এখানে পাওয়া যায়। শুধু কম্বলের একটু দাম বেশি।
সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ক্রেতাদের ডেকে ডেকে কাপড়ের দাম হেঁকে বিক্রি করছিলেন মো. মুন্না। তিনি নগরের আরডিএ মার্কেটের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী। মুন্না বললেন, সপ্তাহে শুক্রবার তাঁদের ছুটির দিন। কিন্তু এই দিনটি ছুটি না কাটিয়ে তাঁরা ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করেন। তাঁদের এখানে ছোট-বড় সবার জামাকাপড় পাওয়া যায়। দামও সাশ্রয়ের মধ্যেই।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে শুক্রবার বেশির ভাগ বিপণিবিতান বন্ধ থাকে। বিশেষ করে জামাকাপড়ের বড় বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকায় বিক্রয়কর্মী ও কর্মচারীরা এক দিনে ছুটি কাটানোর বদলে ব্যবসা করেন। বিপণিবিতানের বিক্রি না হওয়া পোশাক কিংবা ঢাকা থেকে আনা কম দামি পোশাক নিয়ে ফুটপাতে এক দিনের জন্য তাঁরা বিক্রি করেন। এ জন্য ভোরের দিকে এসে তাঁদের দোকানের জায়গা দখলে নিতে হয়। বিক্রি চলে রাত আটটা পর্যন্ত। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ বিপণিবিতানে কাজে নিয়োজিত থাকেন।
মো. সোহেল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ছুটির দিনে এখানে শীতকালে ব্যবসা জমে বেশি। রাতের দিকে রাজশাহীতে শীত পড়ছে। এ কারণে মানুষ শীতের জামাকাপড় কেনা শুরু করে দিয়েছেন। শীত বাড়লে আরও বিক্রি বেড়ে যাবে। শুক্রবার এখানে কয়েক শ দোকান বসে। কম করে হলেও এখানে ৩০-৩৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, সকালবেলায় একটু ক্রেতা কম। বিকেলের দিকে এত ক্রেতা আসে যে কারও সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ থাকে না।
আওলাদ হোসেন নামের ব্যবসায়ী রাজশাহীর গ্রামগুলোর হাটে গিয়ে কাপড় বিক্রি করেন। কিন্তু শুক্রবার তিনি রাজশাহী নগরে চলে আসেন। তিনি বলেন, ছুটির দিনে এখানে যে পরিমাণ বিক্রি হয়, অন্য হাটগুলোতে তা হয় না। এ কারণে সপ্তাহে এক দিন এখানে চলে আসেন।
এই হাট থেকে মো. সালাহ উদ্দিন নামের এক যুবক জিনসের প্যান্ট কিনেছেন। প্যান্টের দাম ২৫০ টাকা। তিনি বলেন, প্যান্টটির কাপড়ের মান ভালো নয়। তবে দাম হিসেবে প্যান্টটি ভালোই। এই ফুটপাত থেকেই জিনিসপত্র কেনেন। দেখেশুনে কিনতে পারলে টেকসই হয়।
রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সেকেন্দার আলী বলেন, ছুটির দিনে বিপণিবিতানের মূল ক্রেতারা আসেন না। কিন্তু একটু নিম্ন আয়ের মানুষ এখানে আসেন। যাঁরা ফুটপাতে বিক্রি করেন, তাঁদের লক্ষ্যও নিম্ন আয়ের লোকজন। এটা ইতিবাচক। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ফুটপাতের এসব দোকান শনিবারও থেকে যায়। সেদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।