ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে এবার মহড়া করে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া। তিনি নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সালথা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তেলয়েত হোসেনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।
এর আগে গতকাল রোববার বিশাল মহড়া করে ফরিদপুরে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহদাব আকবর চৌধুরী। তিনি জাতীয় সংসদের প্রয়াত উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে।
যদিও সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থী কোনো রকম মিছিল কিংবা মহড়া করতে পারবেন না। এ ছাড়া সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁর নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্য কোনো সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।
এ অনুযায়ী গাড়ির বহর নিয়ে মহড়া করে নির্বাচনী মনোনয়ন জমা দেওয়ায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন এই দুই প্রার্থী। বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
জামাল হোসেন মিয়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান, রামকান্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. এশারত হোসেন, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গট্টি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকবার রেজাউর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. নূরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জামাল হোসেন তাঁর কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি নৌকার বিপক্ষে নই। আমি শাহদাব আকবর ও তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে নির্বাচন করে এই এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য প্রার্থী হয়েছি। আমি আওয়ামী লীগের লোক, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ বুকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা জীবন আওয়ামী লীগ করে যাব।’
জামাল হোসেন আরও বলেন, তিনি নগরকান্দা-সালথা-কৃষ্ণপুরের জনগণের ইচ্ছায় রাজনীতি করেন। জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন তাঁকে এ পর্যন্ত এনেছে। জনগণ তা ভোটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জামাল হোসেন মিয়ার সমর্থনে সকাল থেকে সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা থেকে লোকজন মিছিল করে আসায় সালথা উপজেলা কমপ্লেক্সের আশপাশ, সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরকান্দার তালমা থেকে চার শতাধিক মোটরসাইকেল ও দুই শতাধিক গাড়ির একটি বহর নিয়ে সালথায় আসেন জামাল। তিনি একটি ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে জনগণকে শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় পৌঁছান।
মনোনয়ন জমা দেওয়ায় সময় মহড়ার মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে জানতে চাইলে জামাল হোসেন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জনতা স্বতন্ত্রভাবে নিজ উদ্যোগে মহড়া করেছে। এতে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় উপজেলা কমপ্লেক্সে পাঁচজনের বেশি লোক নিয়ে আমি ঢুকিনি। আমি মনে করি এতে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি।’
গত ১১ সেপ্টেম্বর এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যু হলে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা কার হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ১২ অক্টোবর। প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৯ অক্টোবর। আগামী ৫ নভেম্বর ইভিএমে এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৯ জন।