বিএসএফের গুলিতে নিহত মিনারুলের লাশের অপেক্ষায় শয্যাশায়ী বাবা

ছেলের শোকে আহাজারি করছেন মিনারুল ইসলামের মা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খানপুর ভিতরপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর সদর উপজেলায় ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি স্কুলছাত্র মিনারুল ইসলামের (১৬) মৃত্যুর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। স্বজনেরা মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছেন। কিন্তু মিনারুলের লাশ বাড়িতে পৌঁছায়নি। ছেলের শোকে মিনারুলের মা মিনারা বেগম ও বাবা জাহাঙ্গীর আলম এখন শয্যাশায়ী। ছেলের লাশ ফেরত পেতে আজ শুক্রবার সকালে বিজিবির দাইনুর বিওপি ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন জাহাঙ্গীর আলম।

নিহত মিনারুল উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নের খানপুর ভিতরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। সে খানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি রংমিস্ত্রির জোগালির কাজ করত মিনারুল। চার ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল তৃতীয়।

আরও পড়ুন

গত বুধবার বিকেলে মাকে রঙের কাজ করতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় মিনারুল। রাত সাড়ে আটটার দিকে ফোনে মায়ের সঙ্গে মিনারুলের সবশেষ কথা হয়। তখন সে জানায়, রঙের কাজ শেষ হয়নি। আসতে দেরি হবে। এরপর রাত ১০টায় আবারও ফোন করা হলে মিনারুলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে মিনারুল আর বাড়িতে ফেরেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মিনারুলের পরিবার জানতে পারে, বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একই ইউনিয়নের দাইনুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ভারত সীমান্তের ৩১৪ সিএস পিলারের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে তেলিয়াপাড়া এলাকায় ভারতীয় আবাদি জমিতে স্থানীয় লোকজন মিনারুলের লাশ দেখতে পান।

মিনারুল ইসলাম (১৬)
ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনার পর থেকে মিনারুলের স্বজনেরা শোকে পাগলপ্রায়। মিনারুলের চাচাতো ভাই রুবেল হাসান (৩০) বলেন, আজ দুপুরের আগে লাশ ফেরত আনার জন্য চাচা ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে আবেদন করেছেন। দুপুরের পর থেকে দুই-তিনবার চাচা-চাচি জ্ঞান হারিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ডাকা হয়েছিল। তবে পরে কিছুটা স্বাভাবিক হলে অ্যাম্বুলেন্স ফেরত দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিনারুলসহ সাত থেকে আটজন তরুণ গতকাল রাতে দাইনুর সীমান্ত এলাকায় গিয়েছিলেন। রাত ১০টার দিকে গুলি ছোড়ার শব্দ পান স্থানীয় লোকজন। সকালে ভারতীয় স্বজনদের কাছে সীমান্তে মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন এপারের বাসিন্দারা।

মুঠোফোনে বিজিবি বিওপির নায়েক সুবেদার আকতার হোসেন বলেন, মিনারুলের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ ফেরত চেয়ে বিজিবির কাছে আবেদন করা হয়েছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু আইনি প্রক্রিয়া থাকে। সেই কার্যক্রম চলছে।