প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ, সমবায় কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার ২

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

পঞ্চগড়ে সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে এক সমবায় কর্মকর্তাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন বোদা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম (৪১) ও চাকরিপ্রার্থী ললিত মোহন রায় (২৬)।

পুলিশ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বোদা উপজেলার চাকরিপ্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল। বিকেল ৪টার দিকে ভাইভা বোর্ডে চাকরিপ্রার্থী ললিত মোহন রায়ের লিখিত পরীক্ষার খাতায় লেখার সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষায় হাতের লেখা যাচাই করা হয়। এতে হাতের লেখার অমিল পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের সন্দেহ হলে তাঁকে বাসিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি বসতভিটার অর্ধেক বিক্রি করে একটি চক্রকে আট লাখ টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

এমনকি তিনি লিখিত পরীক্ষার দিন নিজে পরীক্ষা অংশ না নিয়ে অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে তাঁর পরিবর্তে কে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তা বলতে না পারলেও টাকা কাকে দিয়েছেন, তা নিয়োগ বোর্ডকে জানান। নিয়োগে বোর্ডের জিজ্ঞাসাকালে তিনি বোদা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে তিন লাখ টাকা এবং রিয়াজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন। সন্ধ্যায় ললিত মোহন রায়ের কথা অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বোদা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকেও ডেকে আনা হয়। পরে দুজনকেই পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশের হাতে সোপর্দ করে নিয়োগ বোর্ড।

এ ঘটনায় গতকাল রাতেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২ থেকে তিনজনকে আসামি করে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় গতকাল রাতে সমবায় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও চাকরিপ্রার্থী ললিত মোহন রায়কে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার রফিকুল ইসলামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পূর্ব গোয়াল পাড়া এলাকায়। আর ললিত মোহন রায়ের বাড়ি বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের দক্ষিণ কালীবাড়ি এলাকায়। মামলার এজাহারভুক্ত অপর আসামি মো. রিয়াজুল ইসলাম (৩২)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চণ্ডীপুর এলাকার বাসিন্দা ও এলিট সমবায় সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আটক করে রাখা দুজনকে গতকাল রাতে থানায় নিয়ে আসা হয়। রাতেই তাঁদের নামে মামলা করা হয়। সেই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ দুজনকে আদালতে হাজির করা হবে।

এর আগে গত ৫ জুলাই প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আটোয়ারী উপজেলার পরীক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে জালিয়াতির অভিযোগে মকসেদুর রহমান (২৮) ও আহসান হাবিব (২৮) নামে দুই চাকরিপ্রার্থী ও জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেলাল উদ্দীন (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৪ আগস্ট জালিয়াতির মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসে ধরা পড়েন স্বপন সেন (২৯) নামের এক চাকরিপ্রত্যাশী।