কিডনিজনিত অসুস্থতায় মৃত্যুপথযাত্রী এক রোগীর চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন আত্মসমর্পণ করা এক তরুণ ও দুই কিশোর। তাঁদের এই দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ।
ডাকাতির চেষ্টার ঘটনা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া পাকাপুল এলাকায় রূপালী ব্যাংক পিএলসির জিনজিরা শাখায় কিছু দুষ্কৃতকারীরা প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ব্যাংকে কর্মরত ১০ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ৬ গ্রাহককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁরা ব্যাংকের কাউন্টার থেকে নগদ ১৫ লাখ টাকা লুট করে একটি ব্যাগে গচ্ছিত রাখেন। একই সঙ্গে আরও তিন লাখ টাকা তিনজনের প্যান্টের পকেটে রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একপর্যায়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরের (৯৯৯) মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা তৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে তাঁদের আত্মসমর্পণ করতে বলেন। এ সময় তাঁদের দাবি করা ১৫ লাখ টাকা ও তাঁদের নিরাপদ স্থানে যেতে সহযোগিতা করার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা পর তাঁরা আত্মসমপর্ণ করতে রাজি হন। পরে তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হেফাজতে নিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে আসেন।
ব্যাংকে হানা দেওয়া তিনজনের একজন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার কুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিয়ন মোল্লা ওরফে নীরব (২২)। অন্য দুজনের বয়স ১৬ বছর। তাঁরা কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা। নীরব পেশায় একজন গাড়িচালক। অন্য দুজন শিক্ষার্থী। তাঁদের কাছ থেকে ব্যাংক থেকে লুট করা নগদ ১৮ লাখ টাকা, চারটি খেলনা পিস্তল, দুটি চাকু, একটি লোহার পাইপ, একটি স্কুলব্যাগ, তিনটি মাস্ক, তিন জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস ও তিনটি কালো চশমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি আহম্মদ মুঈদ আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাঁরা বিদেশি বিভিন্ন সিনেমা ও সিরিজ দেখে অ্যাডভেঞ্চার (রোমাঞ্চকর) অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটাতে পারেন। তবে তাঁদের দাবি করা কিডনিজনিত অসুখে মৃত্যুপথযাত্রী এক রোগীর চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া তাঁদের সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব আল হোসাইন ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।