চট্টগ্রামে সুখবর নেই সবজির বাজারে, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ১২ থেকে ১৫ শতাংশ
সরবরাহ–সংকটে চট্টগ্রামে সবজির দাম বেড়েছে। গত দুই মাসে অধিকাংশ সবজির দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। অমৌসুমি সবজির পাশাপাশি প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় সবজির দামও এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে আলু, বেগুন, পটোল, লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার মতো সবজি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে সবজিখেত নষ্ট হয়েছে। এখন চাহিদার ১৫ শতাংশের মতো সবজি আসছে চট্টগ্রামে।
সরবরাহ কমার কারণ জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম ও আশপাশের উপজেলার অন্তত ১০ জন কৃষক, ব্যাপারী ও আড়তদারের সঙ্গে। তাঁদের ভাষ্য, উৎপাদন অঞ্চলে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে চট্টগ্রামে সবজির সরবরাহ কমেছে। প্রতিদিনের চাহিদার বিপরীতে পণ্য আসছে কেবল ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে স্বাভাবিক সরবরাহে তিন থেকে চার লাখ কেজি সবজি সরবরাহ হয়। বর্তমানে এক লাখ কেজির কম আসছে।
চট্টগ্রামের বাজারে সবজি সরবরাহ হয় নগরের বৃহত্তর সবজির আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে। আড়তদারেরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে অধিকাংশ সবজি আসে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামের আশপাশের উপজেলা থেকে সবজির সরবরাহ করা হয়। তবে বৃষ্টি-বন্যায় কয়েক মাস ধরে সরবরাহ কমেছে।
গতকাল শনিবার আড়তে পটোল, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, করলা, ঝিঙে, কাঁচা পেঁপে, কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়সসহ অধিকাংশ সবজির দাম পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার আশপাশে। এদিন প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে নগরের খুচরা বাজারগুলোতে এসব সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
পাঁচ বছরে দাম নাগালের বাইরে
গত দুদিন চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রতিদিন অধিক পরিমাণে বিক্রি হয়, এমন সবজির তালিকা রয়েছে আলু, বেগুন, পটোল, লাউ ও মিষ্টিকুমড়া। আড়তদারেরাও জানিয়েছেন, বাজারে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি এই পাঁচ সবজির চাহিদা বেশি। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে এসব সবজিও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে প্রায় ১৩৭ শতাংশ বেড়েছে আলুর দাম। ২০২০ সালে নগরের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকার আশপাশে। ২০২৪ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আলুর গড় দাম প্রায় ৬৮ টাকা। অন্যদিকে ভালো মানের বেগুনের দাম একই সময়ে বেড়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ১২০ টাকা ছাড়িয়েছে। এ বছরের শুরুতেও দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল।
অন্যদিকে পটোল ও মিষ্টিকুমড়ার দাম গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ১০ থেকে ১৯ শতাংশ। তবে ২০২০ সালের তুলনায় এ বছরে লাউয়ের দাম খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। তবে গত বছরের তুলনায় দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বাজারে পটোল ও মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। অন্যদিকে লাউ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি লাউ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকার আশপাশে।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যার পর বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। পাইকারি পর্যায়েই দাম ৫০-৬০ টাকার বেশি। গত বছর এ সময় অধিকাংশ সবজি ১৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে ছিল। আরও দুই মাসে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’
চট্টগ্রাম জেলার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় পাইলট (পরীক্ষামূলক) প্রকল্প শুরু হয়েছে। এরপর বড় শহরগুলোতে আশপাশের কৃষক থেকে কিনে এনে সুলভ মূল্যে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। এটি পাইলট প্রকল্পের সফলতা ও সাড়ার ওপর নির্ভর করবে।’