সুনামগঞ্জে ১৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি, পানি বাড়ছে নদী ও হাওরে
সুনামগঞ্জে দুই দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি জেলায় এ মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টি। সেই সঙ্গে উজান থেকে নামছে পাহাড়ি ঢল। এতে নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। গত বছরও এ সময়ে এমন আবহাওয়া ছিল। ফলে গতবারের মতো এবারও ভয়াবহ বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে মানুষের মনে।
তবে নদী ও হাওরে পানি বাড়লেও বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, গত তিন মাস সুনামগঞ্জে তেমন বৃষ্টি হয়নি। তাই হাওর ফাঁকা। এখন বৃষ্টি হওয়ায় হাওরে পানি ঢুকছে। নদীতেও পানি বাড়ছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, পানি দরকার, হাওরে তো পানি নেই। বৃষ্টি হচ্ছে, পাহাড়ি ঢলও নামছে। এতে নদী ও হাওরে পানি বাড়বে। কিন্তু বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের কাছে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা আজ সকাল ৯টায় ছিল ৬ দশমিক ৯ মিটারে। বুধবার একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ৭৫ মিটারে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমা ৭ দশমিক ৮০ মিটার।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, পানি বাড়ছে। ভারী বৃষ্টি আর বজ্রপাতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এভাবে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকলে গতবারের মতো বন্যা দেখা দেবে কি না, সেই আতঙ্ক হচ্ছে।
পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু সুরমা নদী নয়, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামায় সুনামগঞ্জের জাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, কুশিয়ারা, চলতি, কালনীসহ সব নদ-নদীর পানিই বাড়ছে। উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়রখলা এলাকায় সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার প্লাবিত হয়েছে। এতে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে গত বছর এ সময় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। ভারী বর্ষণের সঙ্গে উজানের ঢল নেমেছিল কয়েক দিন। শহরে ঢলের পানি ঢুকে গত বছরের ১৬ জুন সকালে। সন্ধ্যা নামার আগেই পুরো শহর প্লাবিত হয়ে যায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ। বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সেবা। যেন ভয়ংকর এক সন্ধ্যা নামে সুনামগঞ্জে। ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত মাথায় নিয়ে হাজারো মানুষ ছোটেন আশ্রয়ের খুঁজে। উঁচু ভবন, আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন মানুষ। সুনামগঞ্জ চার দিন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। সুনামগঞ্জে সরকারি হিসাবে কমবেশি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। মারা যান ১৫ জন। ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় ৫০ হাজার।