৪০০ টাকার ধনেপাতা ৪ কিলোমিটার দূরেই বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়
প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে ধনেপাতার চাষ করেছিলেন কৃষক হাফিজুল ইসলাম। চাষাবাদে তাঁর খরচ হয় ১৬ হাজার টাকার মতো। এক মাস আগে ৪০০ টাকা কেজি দরে ধনেপাতা বিক্রি করেছেন। জমির অর্ধেকের কম ধনেপাতা বিক্রি করে পেয়েছেন ৮০ হাজার টাকার মতো। এখনো অর্ধেকের বেশি জমিতে ধনেপাতা আছে। সেগুলো বিক্রি করে লাখ টাকার মতো পাবেন বলে আশা তাঁর।
হাফিজুল ইসলাম রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের গফুর মাতুব্বর পাড়ার একজন কৃষক। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মোহসীন চেয়ারম্যানের মোড় বাজারে আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে গোয়ালন্দের সবচেয়ে বড় পাইকারি ধনেপাতার বাজার বসে এখানে। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত এখানে বিক্রি হয় শত শত মণ ধনেপাতা। ছোট ছোট পিকআপ নিয়ে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারীরা এসে ধনেপাতা কিনে নিয়ে যান।
গতকাল বিকেলে মোহসীন চেয়ারম্যানের বাজারে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা যায়, আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষকেরা মাথায় করে কিংবা অটোরিকশায় করে ধনেপাতা নিয়ে আসছেন বিক্রির জন্য। বাজারে নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় গোয়ালন্দ-ফরিদপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশের বাড়িগুলোর উঠানেই স্তূপ করছেন। ব্যাপারীরা ধনেপাতা কিনে উঠানে ছড়িয়ে রাখছেন। সন্ধ্যার পর তাঁদের নির্দিষ্ট পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্যে যাবেন ব্যাপারীরা।
মোহসীন চেয়ারম্যানের বাজারে গতকাল ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছিল ১০ টাকা কেজি, অর্থাৎ ৪০০ টাকা মণ। পাইকারিতে এই দামে বিক্রি হলেও গোয়ালন্দের প্রধান বাজারে ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি, অর্থাৎ ৪ হাজার টাকা মণ।
মোহসীন চেয়ারম্যানের মোড় বাজার থেকে গোয়ালন্দ বাজারের দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার। এটুকু ব্যবধানে প্রতি মণ ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা বেশি দরে।
ধনেপাতা কিনতে বরিশাল থেকে মোহসীন চেয়ারম্যানের বাজারে এসেছেন মফিজ শেখ ও তাঁরা মিয়া নামের দুই ব্যবসায়ী। আলাপকালে তাঁরা বলেন, প্রতিবছর এই মৌসুমে তাঁরা এখানে ধনেপাতা কিনতে আসেন। ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তে এই পাতা নিয়ে বিক্রি করেন। মৌসুমের প্রথম দিকে তাঁরা ৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনে ঢাকায় নিয়ে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। এখন অনেক আমদানি হচ্ছে বলে দাম অনেক কমেছে। এখন ৪০০ টাকা মণ দরে তাঁরা ধনেপাতা কিনছেন।
গোয়ালন্দ বাজার থেকে ধনেপাতা কিনতে আসা কাঁচামাল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, এখান থেকে পাইকারিতে ৪০০ টাকা মণ কিনে ৪০ থেকে ৫০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে বাজারে যাবেন। গড়ে ৪৫০ টাকা মণ দর পড়লেও বাজারের অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করতে হয়। তাঁরা প্রতি কেজি ধনেপাতা ১০০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে এক মণ ধনেপাতা বিক্রি হয় ৪ হাজার টাকায়। তবে এটুকু দূরত্বের পথে দামের পার্থক্য এত হওয়া ঠিক না বলে মনে করেন তিনি।