রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্যকে ঘিরে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে ‘অবরুদ্ধ’ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে তাঁরা ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যারিস রোডে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। বেলা ১২টার দিকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবাশ বাংলাদেশ মাঠে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মানতে রাজি হননি। শিক্ষার্থীদের দাবি, যেখানে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরেছে সেই বিনোদপুরে আলোচনায় বসতে হবে। তাঁরা মিছিল নিয়ে বিনোদপুরে যেতে চান। সঙ্গে উপাচার্যকেও যেতে হবে। একপর্যায়ে উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা শাবাশ বাংলাদেশ মাঠের দিকে আসলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় মানবঢাল তৈরি করে তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
পরে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার, সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ও হুমায়ুন কবীরসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পাশে অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীরা সেখান তাঁদের ঘিরে রাখেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকে বলা হয়, ‘কোনো ঘটনার বিচার আলোচনা করা ছাড়া সম্ভব নয়।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা পৌনে ২টা) সেখানে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন উপাচার্যসহ অন্যরা।
সাংবাদিকদের ওপর চড়াও শিক্ষার্থীরা
এদিকে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে এসে শিক্ষার্থীদের মারধরের শিকার হয়েছেন দুই গণমাধ্যমকর্মী। এ সময় দুটি ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়েছে। আজ বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড সংলগ্ন উপাচার্য বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সংবাদ সংগ্রহের সময় চ্যানেল২৪ এর ক্যামেরাপারসন জুয়েলকে ধাওয়া দেয় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে ও চ্যানেল২৪ এর সাংবাদিক আবরার শাঈরকে মারধর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক সালাহউদ্দিনের ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে আজকের পত্রিকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রিপন চন্দ্র রায়ের ওপর চড়াও হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় এগিয়ে আসলে আরও কয়েকজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আজ সকালের দিকে চ্যানেল২৪ এর একটি লাইভে স্থানীয় লোকজনের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, আবরার শাঈর ও জুয়েলকে মারধর করা হয়েছে। জুয়েলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কালের কণ্ঠের ফটোসাংবাদিক সালাউদ্দিনের ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়েছে। তাঁরা এখনই কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না। সাংবাদিকদের নিরাপদ দূরত্বে থেকে পেশাগত কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শনিবার বগুড়া থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে বাসের আসনে বসাকে কেন্দ্র করে চালক ও চালকের সহকারীর সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আবার বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
দফায় দফায় এ সংঘর্ষে স্থানীয় মানুষের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর এলাকায় দোকানে ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি কাজ করছে।