হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের আমদানি বেড়েছে দ্বিগুণ, তবু বাড়ছে দাম
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ ৯ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ছয় দিন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে দুই দেশের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এ সময়ে বাজারে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে ভারত থেকে এসব পণ্য দ্বিগুণ পরিমাণে আমদানি করেছেন আমদানিকারকেরা। তবুও বন্দর ও আশপাশের উপজেলায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা এবং কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা বেড়েছে।
বন্দর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে টানা ছয় দিন পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ থাকবে—এমন খবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভিড় করছেন। এ কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বন্দরের আমদানিকারক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বন্দরে পেঁয়াজ পাইকারি ৯০ থেকে ৯২ টাকা ও কাঁচা মরিচ সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন আমদানিকারকেরা।
হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ ১২ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসের ২১ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত ভারত থেকে এ স্থলবন্দর দিয়ে ৬৭টি ট্রাকে ১ হাজার ৯৩৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। সেখানে গত আট দিন প্রতিদিনই দ্বিগুণ পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আট কার্যদিবসে ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১৬৬টি ট্রাকে ৪ হাজার ৭৫৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আর এই সময়ে বন্দর দিয়ে ১৮৯টি ট্রাকে ১ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। শুধু গতকাল এক দিনে সর্বোচ্চ ৪৯টি ট্রাকে ৪৩৯ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল থেকে হিলি ও বিরামপুরের বাজারগুলোতে প্রকারভেদে প্রতি কেজি ভারতীয় ভালো মানের পেঁয়াজ খুচরা ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া খুচরা বাজারে নিম্নমানের ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। তবে দেশি জাতের পেঁয়াজ খুচরা ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী রায়হান কবির প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গাপূজার ছুটির কারণে গতকাল ভারত থেকে সর্বশেষ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পূজার টানা ছয় দিন ছুটি থাকায় বাজারে পেঁয়াজের চাহিদাও বেড়েছে। আজ সকাল থেকে হিলি বাজারে ভারতের ইন্দুর জাতের পেঁয়াজ পাইকারি ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলা বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুর্গাপূজার বন্ধের জন্য হিলি বন্দরে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হলেও বন্দরে পেঁয়াজ নিতে স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও বেড়েছে। এত পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কাটলাবাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরা ১১০ টাকা ও দেশি জাতের পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’
হিলি স্থলবন্দরের কাঁচা মরিচ আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতের নাগপুর, কানপুর ও মধুপুর এলাকা থেকে কাঁচা মরিচ আসছে। বর্ষা মৌসুমে ভারতেও কাঁচা মরিচের দাম বেশি হয়। আর এখন বাংলাদেশেও মরিচের উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে বাজারে দাম বেড়ে গেছে। গতকাল বন্দরে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি।’
বাংলাহিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফেরদৌস রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের উৎপাদন ও সরবরাহ কম। আর মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ কিনে নিয়ে পরে দামে কারসাজির মাধ্যমে বাজারে ছেড়ে দেন।