বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার ঘটনায় দুই সমর্থককে বহিষ্কার করল জামায়াত
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এবার দুই সমর্থককে বহিষ্কার করেছে জামায়াতে ইসলামী। আজ সোমবার রাত ৮টার দিকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বহিষ্কৃত জামায়াত সমর্থকেরা হলেন মু. আবুল হাশেম ও মু. অহিদুর রহমান। আবুল হাশেম চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা গ্রামের প্রয়াত আবদুল বারেকের ছেলে এবং অহিদুর একই গ্রামের প্রয়াত শফিকুর রহমানের ছেলে। ওই মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার সময় ধারণ করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, জুতার মালা পরানোর পর ওই দুজন ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধার বাবার দুই হাত ধরে টানাহেঁচড়া করছেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার জামায়াতের আমির মু. শাহজাহান, সেক্রেটারি সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আমির মু. মাহফুজুর রহমান ও উপজেলা সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইনের পক্ষে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছনার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এটি দুঃখজনক ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জামায়াতে ইসলামী শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়, দেশের সাধারণ কোনো নাগরিককেও হেনস্তা করা সমর্থন করে না। এই দুঃখজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জামায়াতে ইসলামীর কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী নয়। জামায়াতে ইসলামীর কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই সমর্থন করে না এবং প্রশ্রয় দেয় না। আমরা স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি যে আবদুল হাই কানু তাঁর নিজ এলাকায় হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলার আসামি। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঢাকায় অবস্থানকারী আবুল হাশেম ও দুবাইফেরত অহিদুর রহমানের শাস্তি দাবি করছি এবং কোনো অবস্থাতেই দেশবাসীকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে জেলা ও উপজেলা জামায়াতের চার নেতা আরও বলেন, ‘আমরা আবুল হাশেম ও অহিদুর রহমানসহ এই ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের শাস্তি দাবি করছি এবং জামায়াতে ইসলামীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ভাব–মর্যাদা ক্ষুণ্ন করায় সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কার ঘোষণা করছি।’
এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের (৭৮) গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
আবদুল হাই ঘটনাস্থলের পাশের গ্রাম লুদিয়ারার বাসিন্দা। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এ ছাড়া একই সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, লাঞ্ছনাকারীরা স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। আবদুল হাইকে এলাকাছাড়া করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে।
তবে শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। তাঁদের ভাষ্য, যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের কেউই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী নন।
তবে এখন দুই সমর্থককে বহিষ্কার করার কথা জানাল জামায়াতে ইসলামী।