প্রথম আলোর প্রতিবেদন নিয়ে জামালপুরে আ.লীগের সংবাদ সম্মেলন
প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যমূলক ও ভিত্তিহীন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ। গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দর্শকসারির বেশির ভাগ চেয়ার খালি থাকা নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে জামালপুর শহরের বকুলতলা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনটি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ। তিনি বলেন, ‘স্বতঃস্ফূর্ত নেতা-কর্মীদের ঢলে কানায় কানায় পূর্ণ জামালপুর জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলন নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় গত ২৮ নভেম্বর অনলাইন সংস্করণে যে উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ পরিবেশন করা হয়, সেটি আমাদের নজরে এসেছে। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে ওই পত্রিকায় প্রকাশিত ভিত্তিহীন সংবাদের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
লিখিত বক্তব্যে বিজন কুমার আরও বলেন, ‘সম্মেলন শুরুর নির্দিষ্ট সময় ছিল বেলা দুইটা। বেলা দুইটার মধ্যেই পুরো মাঠ এবং তৎসংলগ্ন এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়। অথচ জনমনে নেতিবাচক ধারণা দেওয়ার হীন উদ্দেশ্যে দুপুর ১২টার দিকে কিছু আসন খালি থাকার দৃশ্য ধারণ করে তা প্রকাশ করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সুরুজ্জামান প্রমুখ।
প্রতিবেদন ও অভিযোগের বিষয়ে প্রথম আলোর বক্তব্য
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠের বেশির ভাগ চেয়ার খালি থাকার একাধিক ভিডিও ও ছবি প্রথম আলোর কাছে সংরক্ষিত আছে। প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সাড়ে সাত বছর পর হওয়া ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আশানুরূপ লোকসমাগম ঘটেনি।
ওই দিন বেলা ৩টা ৩৭ মিনিটে সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তাঁর বক্তব্যেও লোকসমাগম কম হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘গত দুই দিনের একটা খবরে আমরা সবাই মর্মাহত ও বিস্মিত, যার কারণে হয়তো সম্মেলনে লোকসমাগমে ভাটা পড়েছে।’
সম্মেলনে আসা স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলনের আমেজ অনেকটা কমে গেছে। হয়তো লোকসমাগমও কম হতে পারে। সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন, তা নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা থাকলেও কে আসছেন; সেটা সবাই জেনে গেছে। ফলে যিনি বাদ পড়তে যাচ্ছেন, তাঁর অনুসারীরা সম্মেলনে আসছেন না।
আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, দুপুর ১২টার কিছু ছবি দিয়ে প্রতিবেদক আসন খালি থাকার দৃশ্য ধারণ করে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে প্রথম আলোর বক্তব্য হলো, সংবাদে প্রকাশিত ছবির ক্যাপশনে উল্লেখ ছিল বেলা ২টা ৪০ মিনিটে তোলা ছবি। এ ছাড়া সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শকসারির চেয়ার খালি থাকা অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের একাধিক ভিডিও এবং ছবি প্রথম আলোর হাতে আছে।
সম্মেলন নিয়ে ১৬ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রায় দুই লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে সম্মেলনটি জাতীয়ভাবে উপস্থাপন করা হবে। সেই লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগ, ১০টি সহযোগী সংগঠন ও ৯টি উপকমিটি দিন-রাত কাজ করছে।
সে অনুযায়ী জিলা স্কুল মাঠটি নেতা-কর্মীদের দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। তবে ২৮ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সম্মেলনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সম্মেলনের মাঠের সব চেয়ার খালি। দুপুর ১২টার পর খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কিছু নেতা-কর্মী মাঠে প্রবেশ করছেন। বেলা দেড়টা পর্যন্ত মাঠের বেশির ভাগ চেয়ার খালি ছিল। এরপর বেলা দুইটায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। তখনো বেশির ভাগ চেয়ার খালি পড়ে ছিল। বেলা তিনটার দিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখনো চেয়ার খালি ছিল। সেই সময়ের ভিডিও প্রথম আলোর কাছে আছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্যের সময় মাঠের পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেসব ভিডিও আছে।