ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চান সবাই
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ মার্চ এ নির্বাচন হবে। ভোট গ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাধারণ নাগরিকেরাও এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চাইছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে।
এর আগে গত বুধবার ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ মার্চ এ নির্বাচন হবে। ভোট গ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
তবে নির্বাচনের তফসিলে ঘোষণা আগেই গত রোববার নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই মেয়র পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার পোস্টার চোখে পড়ে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে। ওই সব পোস্টারে ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবের ঘোষণা রয়েছে। মেয়র পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক ওই নেতারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
২০১৯ সালের ৫ মে এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও মেয়র নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। যে কারণে মানুষ নির্বাচনী আমেজ থেকে অনেকখানি বঞ্চিত হন। তবে এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই।
মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা সাদেক খান মিল্কী, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ফারামার্জ আল নূরের নাম এসেছে। তাঁরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমকেও মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
আমরা এখনো সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই আছি। দলীয় সিদ্ধান্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ফারামার্জ আল নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে এবার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থাকবে কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। কাজেই মনোনয়ন না পেলে কী হবে, সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে আশা করি।’
গতকাল নগরের ছোটবাজার, বড়বাজার, স্টেশন রোড, আর কে মিশন রোড ও চরকালীবাড়ি এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের আড্ডায় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এসব আলোচনায় উঠে আসছে বিএনপি বা জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসবে কি না। এ দুই দল না এলে আওয়ামী লীগ থেকেই হয়তো এক বা একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।
নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিয়াদুল আহসান বলেন, নগরের উন্নয়নের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হওয়া জরুরি। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে এখনো কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। মানুষ চায় উন্নয়ন এবং সব ধরনের নাগরিক সুবিধাপূর্ণ নগর। এ জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হওয়া উচিত।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত আলী ইউসুফ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচন একটা বিশ্বাসের নাম। মানুষের সে বিশ্বাসই এখন নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষ নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনেও মানুষ মেয়র পদে ভোট দিতে পারেনি। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ ভোট হোক। পাশাপাশি নির্বাচিত মেয়র বা কাউন্সিলররা জবাবদিহির মধ্যে থাকুন।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক বলেন, ‘গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আমিও আশা করি।’
মেয়র আরও বলেন, ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরশনের নির্বাচন হয় ২০১৯ সালে। এরপরই দেশে করোনার প্রভাব শুরু হয়। পরে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। এ দুটি কারণে ওই সময় বিশ্বব্যাপীই উন্নয়নকাজ কম হয়েছে। তবে ওই সময় আমরা ময়মনসিংহ নগরে বসবাস করা মানুষকে নিরাপদ রাখাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি।’
নির্বাচনের বিষয়ে জাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু মুসার সরকার বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত হলে আমরা সবাইকে জানাব।’
নির্বাচন বিএনপি অংশ নেবে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ময়মনসিংহ মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হান্নান খান বলেন, ‘আমরা এখনো সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই আছি। দলীয় সিদ্ধান্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদি দল নির্বাচনে আসে, তাহলে বিএনপি থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে।’