গাজীপুর সিটির টঙ্গী কার্যালয়ের ১৪ গাড়ি আগুনে পুড়েছে, কার্যক্রম ব্যাহত
কার্যালয়ের মূল ফটকের পাশে বিধ্বস্ত দুটি কক্ষ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ভাঙা কাচ, আগুনে পোড়া আসবাব। সেখান থেকে কিছুটা সামনে এগোতেই যেন ধ্বংসস্তূপ। ২০–২৫টি সারিবদ্ধ গাড়ি। কোনোটি পুরোপুরি আগুনে পোড়া, কোনোটি আধা পোড়া। কোনো গাড়ি ভাঙচুরের শিকার। ঘটনার চার দিন পরও বাতাসে পোড়া গন্ধ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত শনিবার কার্যালয়টিতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কিছু গাড়ি ও স্থাপনা। ঘটনার চার দিন পরও কার্যালয়টির সামনে পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষ।
কার্যালয়টির কর্মকর্তারা জানান, শনিবারের হামলায় তাঁদের ২২টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি গাড়ি পুরোপুরি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ভাঙচুর করা হয়েছে ৮টি গাড়ি। এই ২২ গাড়ির মধ্যে রয়েছে ময়লাবাহী ৬টি, কর্মকর্তাদের যাতায়াতে ব্যবহৃত ৮টি, হুইল লোডার (ময়লা পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত) ২টি, হাইড্রোলিক বিম লিফটার (বিদ্যুতের কাজে ব্যবহৃত) ২টি, টেম্পো ১টি, রোলার ১টি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১টি গাড়ি। এ ছাড়া কার্যালয়ের দুটি অফিসকক্ষে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী ও সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সোহেল রানার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় তাঁদের অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুরো ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে প্রায় এক বছর লাগবে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ বা টঙ্গী কার্যালয় অবস্থিত। মূল ফটকের পাশে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও যন্ত্রবিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার কক্ষ। দুটি কক্ষেই ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষের ভেতরে পড়ে আছে আগুনে পোড়া আসবাব ও কাগজপত্র। কক্ষ দুটির সামনে একটি ফাঁকা জায়গায় সারিবদ্ধ ২০–২৫টি গাড়ি। ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া এসব গাড়ি অকেজো হয়ে পড়েছে। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ, কাচ ও বিভিন্ন জিনিসপত্র।
কার্যালয়টির সামনে একেবারে দক্ষিণ পাশে একটি টিনের ছাউনির নিচে সারিবদ্ধভাবে রাখা ৬টি গাড়ি। সব কটি গাড়িই আগুনে পোড়া। গাড়ির ভেতরের সবকিছু আগুনে পুড়ে ছাই। গাড়িগুলোর সামনে যেতেই ভেসে আসে পোড়া গন্ধ।
কথা হয় নিরাপত্তাকর্মী আবু তালেবের সঙ্গে। ঘটনার দিন তিনি মূল ফটকে দায়িত্ব পালন করছিলেন। হামলার এক পর্যায়ে তিনি কার্যালয়ের একটি শৌচাগারে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বাঁচেন।
আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৯টার দিকে তিনিসহ দুজন মূল ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ ৬০–৭০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে কার্যালয়ের মূল ফটক ও দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রথমেই তারা ফটকের পাশের দুটি কক্ষ নির্বিচার ভাঙচুর ও আগুন দেয়। এরপর কার্যালয়ের সামনে থাকা গাড়িগুলোতে ভাঙচুর চালায় ও আগুন দেয়। এ সময় কয়েকজন হামলাকারী তাঁর দিকে এগিয়ে আসে। তিনি কৌশলে কার্যালয়ের দোতলার একটি শৌচাগারে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে। হামলাকারীরা বেলা দুইটার দিকে চলে যায়।
ময়লা পরিষ্কার বা পরিবহনে টঙ্গী কার্যালয়ে ১৮–২০টি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি গাড়িই এখন অকেজো। এ কারণে নগরের ময়লা ঠিকমতো পরিষ্কার করা যাচ্ছে না।ফজলে রাব্বি, যান্ত্রিক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী
ব্যাহত হচ্ছে জরুরি কাজ
যানবাহন অচল হয়ে পড়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম। বিশেষ করে ময়লা পরিবহনের কাজে বেশি সমস্যা হচ্ছে। নগরভবন থেকে ময়লাবাহী গাড়ি এনে বা বিকল্প ব্যবস্থায় কাজ করতে হচ্ছে। এতে সময় লাগছে বেশি এবং ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া অফিসের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি পুড়ে যাওয়ায় যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
যান্ত্রিক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ময়লা পরিষ্কার বা পরিবহনে টঙ্গী কার্যালয়ে ১৮–২০টি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি গাড়িই এখন অকেজো। এ কারণে নগরের ময়লা ঠিকমতো পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। নগরভবন থেকে গাড়ি এনে বা বিকল্প ব্যবস্থায় কাজ করতে হচ্ছে। তা ছাড়া অধিকাংশ কর্মকর্তার গাড়ি পুড়ে গেছে। তাঁরাও জরুরি কাজে যাতায়াত করতে পারছেন না।