ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের বাস যোগাযোগ বন্ধ, বিকল্প যানে বাড়তি ভাড়া
সদা ব্যস্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হঠাৎই যেন প্রাণ হারিয়েছে। আজ শনিবার সকাল থেকে মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা। যাত্রীবাহী কোনো বাসও চলতে দেখা যাচ্ছে না। এতে ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গণপরিবহন না পেয়ে রাজধানীগামী মানুষ বিকল্প হিসেবে বাড়তি ভাড়া দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা ও মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে বাস বন্ধ রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি। তাঁদের দাবি, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যাত্রী নেই বলে মালিকেরা বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আজ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মৌচাক, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের পাগলা এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুরের হালিমা বেগম মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেটে কাজ করেন। বাস না পেয়ে অটোরিকশায় জনপ্রতি ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে তিনি মদনপুর থেকে শিমরাইল আসেন। শিমরাইল থেকে তিনি হেঁটে মাতুয়াইল যাচ্ছেন। পথে সাইনবোর্ড এলাকায় হালিমার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। হালিমা বলেন, তাঁর স্বামী তিন বছর ধরে অসুস্থ। মার্কেট দেখাশোনার কাজ করে তিনি যা আয় করেন, সেটা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। এ জন্য বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও পেটের দায়ে তিনি বেরিয়েছেন।
রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী ডালিম উদ্দিন যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন। ভুলতা থেকে তিনি নিয়মিত মেঘলা পরিবহনের বাসে যাত্রাবাড়ী যাতায়াত করেন। তবে আজ বাস বন্ধ থাকায় তিনি অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে সাইনবোর্ড পর্যন্ত এসেছেন। ভুলতা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত আসতে তাঁর টাকা খরচ হয়েছে ১৫০ টাকা। অথচ অন্যদিন তিনি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় যাত্রাবাড়ী যেতে পারেন।
এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও বিএনপির কর্মী ও সমর্থকদের দুই-তিনজনের দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকায় যেতে দেখা গেছে।
শহরের আমলপাড়া এলাকার বিএনপির কর্মী সোহেল আলী বলেন, দলের সবাই মিলে সমাবেশে যাবেন বলে তাঁরা পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে পুলিশি গ্রেপ্তার ও হয়রানির কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে ঢাকায় যেতে পারছেন না। তাই দল থেকে জানানো হয়েছে, বিকল্প উপায়ে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে।
ফতুল্লার লালপুর এলাকার বাসিন্দা যুবদল কর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যত বাধা আসুক না কেন, বিএনপির কর্মীরা সমাবেশে অংশ নিবেই। অটোরিকশায় সাইনবোর্ড পর্যন্ত এসেছি। বাকি পথও চলে যাব।’
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের কারণে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমাবেশে যেন লোকজন যেতে না পারে, সে জন্যই গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে যত বাধা দেওয়া হোক না কেন, বিএনপির নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ নানা উপায়ে সমাবেশে অংশ নিচ্ছে।’
তবে বাস বন্ধ রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি দিদার খন্দকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে বাস বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে শুক্রবার যাত্রী না থাকায় বাস মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক বাসমালিক তাঁদের গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। তবে তাঁরা বিএনপির কর্মসূচির কারণে গাড়ি বন্ধ রাখেননি বলে দাবি করেন।
মহাসড়কে পুলিশি তল্লাশি অব্যাহত
আজ সকাল থেকে মহাসড়কের সাইনবোর্ড, মৌচাক, মদনপুর, চাষাঢ়া, বালু সেতু, সুলতানা কামাল সেতু, পূর্বাচল ৩০০ ফুট, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের পাগলা এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। এসব স্থানে পুলিশ তল্লাশিচৌকি বসিয়ে ঢাকাগামী যানবাহনে তল্লাশি করছে এবং যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় শতাধিক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওয়াটার ক্যানন কার ও এপিসি কার নিয়ে অবস্থান নিয়েছে জেলা পুলিশ।
জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু প্রথম আলোকে বলেন, জেলার নিরাপত্তার স্বার্থে সাড়ে আট শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে কেউ যেন নাশকতার উদ্দেশ্যে বোমা বা বিস্ফোরক কিছু নিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে।