রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার নতুন ভোটার বেড়েছে ৩০ হাজারের বেশি। তাঁদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। কেউ কেউ স্নাতক শেষ করেছেন, কেউ স্নাতকে পড়ছেন। আবার কেউ চাকরিপ্রত্যাশী হয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। নতুন এই ভোটাররা বলছেন, পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে রাজশাহীর খ্যাতি থাকলেও এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। আছে মাদকের ছড়াছড়ি। নগরপিতা হয়ে যিনি আসবেন, তাঁদের এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে।
আগামী বুধবার সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে একজন মেয়র প্রার্থী ছাড়া তিনজনই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তাঁরাও কর্মসংস্থানের বিষয়টি সামনে এনেছেন।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আয়তন ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২। এর মধ্যে নতুন ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার ১৫৭। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন। হিজড়া ভোটার ৬ জন। ২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২২ হাজার।
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক অন্তত ৩০ জন নতুন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের কাছে প্রশ্ন ছিল, রাজশাহী শহরে কী কী সমস্যা আছে, সামনে শহর রাজশাহীকে কেমন দেখতে চান। তাঁরা বলছেন, অলিখিত শিক্ষা নগরীখ্যাত রাজশাহীতে নেই শিল্পকারখানা। এখানে লেখাপড়া শেষ করে কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকাসহ অন্য বিভাগীয় শহরে পাড়ি দিতে হয়। শহটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়েও এগিয়ে। তবে শহরের সবুজায়ন সেভাবে বাড়েনি। এখানে ঐহিত্য উন্নয়নে বলি হয়েছে। মাদকের ছড়াছড়ি নিয়েও তরুণদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের বাড়ি নগরের শাহমখদুম থানার পাশে। তিনি প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী শহর শিক্ষানগরী। এখানে শুধু শিক্ষাই পান। কর্মসংস্থান নেই। লোকজনকে ঢাকায় চলে যেতে হয়। রাজশাহীর শিক্ষিত তরুণেরা যদি রাজশাহীতেই কিছু করতে পারেন, তাহলে একদিকে ঢাকানির্ভরতা কমবে, রাজশাহীকেও সমৃদ্ধ করতে পারবেন। তিনি চান কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা দ্রুত হোক।
নগরের কাজীহাটা এলাকার নতুন ভোটার নাফিজা আক্তার বলেন, অন্য শহরগুলোর তুলনায় একেবারেই আলাদা রাজশাহী শহর। এখানকার রাস্তাঘাট সুপ্রশস্ত। প্রচুর লাইটিং করা হয়েছে রাস্তাঘাটগুলোতে। কিন্তু তেমন কলকারখানা নেই। মানুষের কাজ বলতে শহরে অটোরিকশা চালানোটাই চোখে পড়ে। এই শহরে কৃষিভিত্তিক নানা ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
মাদকের ছড়াছড়ি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তরুণ ভোটার জাহিদুল ইসলাম। রাজশাহী সিটি কলেজের এই শিক্ষার্থী বলেন, রাজশাহী শহরটি সীমান্তবর্তী শহর হওয়াতে মাদকের ছড়াছড়ি রয়েছে। এখানে এমন পরিস্থিতি, যেন হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। এ কারণে শহরে অপরাধ বেড়েছে। এই সব কাজে তরুণেরাই যুক্ত হচ্ছেন। এতে ছিনতাই, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে। তরুণদের যদি কাজে ব্যস্ত রাখা যেত, তাহলে মাদক নেওয়া কমে যেত, অপরাধও কমে যেত।
নগরের ভোটার নাহিদ হাসান বলেন, এই শহরটি ভেঙে নতুনভাবে গড়া হয়েছে। অনেক ঐতিহ্যবাহী ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রতিটি শহরের প্রাচীন ইতিহাস থাকে, যা শহরকে জানতে-বুঝতে সাহায্য করে। কিন্তু রাজশাহীতে সেগুলো মুছে ফেলা হয়েছে। এখন যেগুলো অবশিষ্ট আছে, সেগুলো রক্ষা করা দরকার। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এবার প্রথম ভোট দেবেন রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী রবিন মিয়া। তিনি নগরের নওদাপাড়া এলাকায় থাকেন। বর্তমানে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রবিন বলেন, রাজশাহী শহর নিয়ে অনেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই শহরের একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। অপর দিকে শহরটি সবুজায়ন কমে যাচ্ছে, মানুষ বাড়ছে। এই শহরকে বসবাসযোগ্য করতে হলে শহরটি পরিকল্পিত করে গড়ে তুলতে হবে।
একই রকম কথা বললেন সত্যেন চন্দ্র। তিনি বলেন, এই শহরের মানুষ যেমন থাকবে, তেমনি জীববৈচিত্র্যও থাকবে। এখানকার সড়কবাতিগুলোর আলো ওপরের দিকে যায়। এতে আলোকদূষণও হচ্ছে। আবার জলাশয়গুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সিটি মেয়র হিসেবে জলাশয় রক্ষা করতে হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে খেয়াল করতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, রাজশাহী অঞ্চল একসময় ব্যাপক বৈষ্যমের শিকার হতো। সাবেক মেয়র এই শহরের জন্য অনেক টাকা নিয়ে এসেছেন। এটা খুবই ইতিবাচক দিক। কিন্তু এখানে যে ধরনের উন্নয়ন হয়েছে, সেটাকে উন্নয়ন বলা যাবে না। কারণ মানুষের কর্মসংস্থান নেই। এবার তিনি কর্মসংস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। এই শহরের উন্নয়ন করার আগে পরিবেশের কথা সবার আগে চিন্তা করতে হবে।