পঞ্চগড়ে ঈদের নামাজ নিয়ে যা হলো....
প্রতিবছরের মতো এবারও পঞ্চগড় পৌরসভায় ১৮টি ঈদগাহে ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে নামাজ আদায়ের ঘোষণা দিয়ে গতকাল রোববার দুপুর থেকে মাইকিং করে পঞ্চগড় পৌরসভা। এতে তাৎক্ষণিকভাবে সাজসজ্জার কাজ বন্ধ রাখা হয়। পৌরসভার ঘোষণা উপেক্ষা করে আজ সোমবার বেশ কয়েকটি ঈদগাহে নামাজ আদায় করা হয়েছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে অদূরদর্শী হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টির ব্যাপক সমালোচনা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুনের দাবি, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস দেখে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-খতিবদের পরামর্শ অনুযায়ী মসজিদের ভেতর ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় পৌরসভার ১৮টি ঈদগাহে ফটক তৈরি ও শামিয়ানা টানানোর জন্য বাঁশের খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। কোনো ঈদগাহে কাপড় বা শামিয়ানা টানানো হয়নি। এরপর ঈদের সকালে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে পৌর এলাকার প্রতিটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেন পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন। তাঁর নির্দেশে মাইকিং করে প্রচারও চলে। রাত ১২টার পর পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ ঈদগাহে ঈদের জামাত সকাল ৮টায় হবে বলে প্রচার চালায় উপজেলা পরিষদ। এরপর পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় ঈদগাহেও নামাজ আদায়ের ঘোষণা দিয়ে মাইকিং চালানো হয়। ঈদের নামাজ আদায় নিয়ে ভিন্ন ধরনের একাধিক মাইকিং শুনে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন মুসল্লিরা।
আজ সকাল ৮টায় পৌরসভার রামের ডাঙ্গা এলাকায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহের খোলা মাঠেই নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এতে শুধু বাঁশের খুঁটি ও বাঁশ টানানো হয়েছিল। এ ছাড়া পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ ঈদগাহ, জালাসী ঈদগাহ, তুলার ডাঙ্গা ঈদগাহসহ বিভিন্ন ঈদগাহেও নামাজ আদায় করা হয়েছে।
এস এম তানিন নামের আরেক ব্যক্তি নিজের ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘পঞ্চগড় পৌরসভার ঈদগাহ মাঠগুলো সাজানো হলো না বৃষ্টির অজুহাতে। পৌরবাসী এখন আবহাওয়াবিদ।’ নামাজ শেষে পঞ্চগড় পৌরসভার কায়েতপাড়া এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ছোট থেকে দেখে এসেছি পৌর কর্তৃপক্ষ ঈদগাহ সাজানোর কাজ অন্তত দুদিন আগেই শেষ করে। আর বৃষ্টি হলে বিকল্প হিসেবে মসজিদে নামাজের কথা বলা হয়। কিন্তু এবার কী কারণে শুধু বাঁশ পুঁতে রেখে মাঠ সাজানো হলো না, বুঝতে পারছি না। এতগুলো মানুষের কথা না ভেবে মেয়র সাহেব কীভাবে আগাম একটা ঘোষণা দিলেন, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না।’
সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আল তারিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র সাহেব কারও সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই একক সিদ্ধান্তে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের মাইকিং করিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি মাঠে বাঁশ টানালেও শামিয়ানা টানাননি। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরে সাধারণ মুসল্লিদের কথা বিবেচনা করে পরামর্শক্রমে রাত ১২টার পর মাইকিং বের করে দিয়েছিলাম।’
মেয়র জাকিয়া খাতুন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ জুন পৌর পরিষদের একটি সভায় বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহের ইমাম-খতিবদের পরামর্শ নেওয়া হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বার্তা অনুযায়ী সবাই বলেছেন, ঈদের দিন বৃষ্টি হতে পারে। তাঁদের কথামতোই মসজিদে নামাজ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরও যদি কেউ ঈদগাহে নামাজ পড়েন, তাহলে তো কোনো আপত্তি নেই।
জাকিয়া খাতুন আরও বলেন, ‘আমার যদি মাঠ সাজানোর ইচ্ছা না-ই থাকত, তাহলে তো সাজসজ্জার কাজ শুরু করতাম না। আমি তো কাজ শুরু করেছিলাম। এমনকি টাকা দিয়ে কাউন্সিলরদের দায়িত্বও দিয়েছিলাম। যাঁরা আগামী দিনে নির্বাচন করতে চান এবং আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন, তাঁদেরই কয়েকজন এ ধরনের সমালোচনা করছেন।’