ট্রাকের চাপায় মাইক্রোবাসের ৭ যাত্রী নিহতের ঘটনায় মামলা, ট্রাকচালক কারাগারে
নরসিংদীর শিবপুরে পাথরবোঝাই ট্রাকের চাপায় মাইক্রোবাসের সাত যাত্রী নিহতের ঘটনায় দুই চালককে আসামি করে মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই মো. নুরুল হুদা শিবপুর থানায় মামলাটি করেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ট্রাকচালককে আজ শনিবার দুপুরে নরসিংদীর আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাঁকে জেলহাজতে পাঠান।
মামলার দুই আসামি হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদীবাজার এলাকার মৃত সাহাবুদ্দীনের ছেলে ট্রাকচালক মো. শাহজাহান (৪২) এবং টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রানীরহাট এলাকার হযরত আলীর ছেলে মাইক্রোবাসচালক মো. নাসির (২৮)। ঘটনার পর থেকেই মাইক্রোবাসচালক মো. নাসির পলাতক।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই ১০ চাকার ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে সাতজন নিহত ও চারজন আহত হন। নিহতদের মধ্যে বাবুল মোল্লা বাদে বাকি ছয়জন ও আহত তিনজন ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার এসবি নিটিং লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার কর্মী। বাবুল পার্শ্ববর্তী অন্য একটি কারখানার কর্মী। শুক্রবার ছুটির দিনে দল বেঁধে মাইক্রোবাসে করে সিলেটে ঘুরতে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
নিহত সাতজন হলেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরফে সবুজ (৩০), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমীন খান (২৭), ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পারগোপারপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমীন হাওলাদার (২৯), জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহাম্মেদ (৩৬), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আউয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদি উপজেলার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) এবং কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা দেখতে পান একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৯-৮১৪০) ও একটি ১০ চাকার ট্রাকের (যশোর-ট-১১-৩০২৬) মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই ট্রাকটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। অন্যদিকে ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা মাইক্রোবাসটি সিলেটের দিকে যাচ্ছিল। অন্য একটি গাড়িকে দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় সামনে চলে আসা ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুমড়েমুচড়ে থাকা মাইক্রোবাসটির ভেতরে ১১ জন যাত্রী আটকে ছিলেন। যাত্রীদের উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসার পর রাজু আহাম্মেদ, মীর নাজমুল হক, আল আমীন হাওলাদার, বাবুল মোল্লা ও রায়হান সিকদার নামের পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। বাকি ৬ জনকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুল আউয়াল ও আল আমীন খান নামের আরও দুজন মারা যান। হাসপাতালটির চিকিৎসকের পরামর্শে অপর চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ট্রাকচালক শাহজাহানকে আটক করা সম্ভব হলেও মাইক্রোবাসচালক নাসির পালিয়ে যান। রাতেই ওই মাইক্রোবাস ও ট্রাক জব্দ করে ফাঁড়িতে আনা হয়। পরদিন বিকেলে নিহত সাতজনের পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ কবির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নিহত সাতজনের স্বজনদের অভিযোগ না থাকলেও দুই গাড়ির চালক দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় অপরাধ করেছেন। তাই দুই চালকের বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, গতকাল রাতেই ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। ট্রাকচালক মো. শাহজাহানকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাঁকে জেলহাজতে পাঠান। মাইক্রোবাসচালক মো. নাসিরকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।