নোয়াখালীর চার আসনে নৌকা-স্বতন্ত্র হাড্ডাহাড্ডি
নোয়াখালীর ছয়টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে। আসনগুলো হচ্ছে নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী আংশিক), নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক), নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) ও নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর)। চারটি আসনে চার স্বতন্ত্র প্রার্থী নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্যদের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতীক বরাদ্দের দিনই তাঁরা প্রচারণা শুরু করেছেন জোরেশোরে।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম। এই আসনে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন একই দলের সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা খন্দকার রুহুল আমিন। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রুহুল আমিনের প্রভাব রয়েছে। তা ছাড়া চাটখিল আওয়ামী লীগের একটি অংশও তাঁর পক্ষে ভোটের মাঠে নানাভাবে কাজ শুরু করেছে।
নোয়াখালী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি ব্যবসায়ী আতাউর রহমান ভূঁইয়া। এলাকায় দুজনেরই যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ আমরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়ার পক্ষে রয়েছি। তা ছাড়া দলের প্রার্থীর বিপক্ষে যাওয়া যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা নেই। এ কারণে আমরা আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে মাঠে নেমেছি।’
নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মামনুর রশিদ। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ আহমেদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এবং সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ছোট ভাই। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম জাফর উল্যাহসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্য বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। এ কারণে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ মিনহাজ আহমেদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম জাফর উল্যাহ বলেন, ‘এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা না থাকার পরও একই ব্যক্তিকে বারবার দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী রয়েছেন। তা ছাড়া নেত্রী বলেছেন, দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া হলেও নির্বাচনে যে জিতবে, তিনি তাঁকে টেনে নেবেন।’
নোয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুর করিম চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দিন। তিনি এর আগে সদর উপজেলা পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তাঁর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী নিজেই উপস্থিত ছিলেন। এই আসনের আওতাধীন সুবর্ণচর উপজেলায় খায়রুল আনমের ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে, যেটি নির্বাচনে শিহাব উদ্দিনের পক্ষে কাজ করতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। আবার সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন শিহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল থেকে কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় আমরা আমাদের পছন্দের প্রার্থী শিহাব উদ্দিনের পক্ষে মাঠে নেমেছি। তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আমাদের পক্ষে রয়েছেন।’
দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতা-কর্মীদের প্রচারণায় অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য দলীয় একটা সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে যেহেতু দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয়, সে ক্ষেত্রে দলের কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারেন। এ নিয়ে দল কোনো বাধা দেবে না।