হাসপাতালের লাশঘরের সামনে বিষণ্ন মুখে দাঁড়িয়েছিলেন সুগতি চাকমা। গত সোমবার রাতে পানছড়িতে নিহত চার ইউপিডিএফ কর্মীর একজন লিটন চাকমার বড় ভাই তিনি। ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান সুগতির মুখে শোনা গেল শান্তির বার্তা। বললেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের হানাহানি-মারামারি বন্ধ করা দরকার। আমি চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক। আমার একটাই চাওয়া, আমরা আজ ভাইকে হারিয়েছি, আর যেন কোনো বাবা-মা ছেলে না হারান। ঐক্যবদ্ধভাবে মিলেমিশে সবাইকে রাজনীতি করতে হবে।’
আজ বুধবার দুপুরে খাগড়াছড়ি হাসপাতালের লাশঘরের সামনে সুগতির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সেদিনকার ঘটনায় নিহত বিপুল চাকমার কাকা নিরুপম চাকমার দেখা মিলল সেখানে। তিনিও বললেন একই কথা। এমন সংঘাত কেউ চান না তাঁরা। নিরুপম বলেন, ‘বিপুলের মা ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর ক্যানসারে মারা যান। এরপর তাঁর বাবার ভরসা ছিল একমাত্র ছেলে বিপুল। বিপুল মারা যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে তাঁর বাবা, দাদা-দাদি পাগলপ্রায়। জানি না, তাঁদের কীভাবে সামলাব, কী বলে সান্ত্বনা দেব।’
ওই দিন নিহত সুনীলের ছোট ভাই গণেশ্বর ত্রিপুরা আক্ষেপ করে বলেন, ‘কী হবে এই খুনোখুনি দিয়ে। দিন শেষে কারও না কারও মায়ের বুকই খালি হয়। আর আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের প্রিয়জন।’
লাশঘরের সামনে ২০ থেকে ২৫ জন নারীর জটলা দেখা যায়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সবাই বিপুলের এলাকাবাসী। মূলত বিপুলকে ভালোবেসে একনজর দেখার জন্য পানছড়ি পুজগাং এবং লোগাং থেকে গাড়ি ভাড়া করে এসেছেন হাসপাতালে।
নিহত রুহিন ত্রিপুরার বড় ভাই চন্দ্র জয় ত্রিপুরা ভাইয়ের লাশ গ্রহণ করার সময় ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবি করেন। ঘটনার ৪০ ঘণ্টার পর বুধবার বেলা তিনটার দিকে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
এদিকে এই ঘটনায় নিহত বিপুল চাকমার কাকা নিরুপম চাকমা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ের ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে আজ বিকেলে পানছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শফিউল আজম।
মামলার বাদী নিরুপম চাকমা বলেন, ‘ঘটনার সময় যেহেতু আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না তাই অপরাধীদের দেখিনি। সে জন্য অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেছি। আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা এখন পুলিশের কাজ। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
জানতে চাইলে পানছড়ি থানার ওসি শফিউল আজম বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। লাশ জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহ নিয়ে যেতে সন্ধ্যা হবে। মরদেহ নিহতদের বাড়িতে পৌঁছালে নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুসারে মরদেহ সৎকার করা হবে।
সোমবার রাত ১০টার দিকে পানছড়ি লোগাং ইউনিয়নের অনিলপাড়ায় ইউপিডিএফের চারজন নেতা-কর্মী নিহত হয়। নিহতরা হলেন ইউপিডিএফের গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা (৩২), গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সহসভাপতি লিটন চাকমা (২৯), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা (২৯) ও ইউপিডিএফের সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরা (৪৯)। এই ঘটনায় পিসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য নীতি দত্ত চাকমা, হরিকমল ত্রিপুরা, প্রকাশ ত্রিপুরা নামের তিনজন নিখোঁজ আছেন বলে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।