গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের বাড়ির সামনে বাঁশের বেড়া
জমি বিক্রির টাকা না পেয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির সামনে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন জমি বিক্রেতারা। তাঁরা বাড়ির সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছেন দুটি সাইনবোর্ড। জাহাঙ্গীর আলমের ওই বাড়ি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে নগরীর ছয়দানা এলাকায় অবস্থিত।
ওই জমির মালিকানা দাবি করা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তাঁর মা সাবেক মেয়র জায়েদা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসময় বাসন সড়ক এলাকার লেহাজ উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সেখানে ভাড়া থেকে ছয়দানা এলাকায় জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির সামনের তিনটি দোকানঘর জমির মালিক বিক্রি করতে না চাইলে তিনি কিছুটা বেকায়দায় পড়েন। পরে জাহাঙ্গীর আলমের মামা ও স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে আলোচনা করে জমির মালিক সাইফুল ইসলাম ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় জমির মালিকেরা সোয়া শতাংশ জমি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে রাজি হন। প্রায় ১০ বছর হয়ে গেলেও তাঁরা সেই জমির টাকা পাননি।
আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িটির মূল গেটটি লাগানো। সামনে কয়েকটি সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে বাঁশ দিয়ে এমনভাবে বেড়া দেওয়া হয়েছে, ভেতরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সামনে একটি সাইনবোর্ড আছে। সেখানে লেখা আছে, ‘পৈতৃক সূত্রে এই জমির মালিক সাইফুল ইসলাম, মাসুদা বেগম, মাসুদ মন্ডল, মামুন মন্ডল, কামরুন নাহার ও সামসুন নাহার। এ ছাড়া সেখানে জমির মৌজা ও পরিমাণও লেখা আছে।’ সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় মানুষ কৌতূহল নিয়ে ওই সাইনবোর্ড দেখছেন এবং পড়ছেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুড়ে যায় বাড়ির সব আসবাব। এরপর থেকে জাহাঙ্গীরও ওই বাড়িতে যাননি। এই সুযোগে ওই বাড়ির সামনে ফাঁকা থাকা জমিতে সাইফুল ইসলাম বাঁশের বেড়া দিয়েছেন। সেখানে নিজের ও ভাতিজা এবং স্বজনদের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিয়েছেন। সাইনবোর্ডে নিজের নম্বরও লিখে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে জমির মালিক দাবিদার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওই স্থানে মার্কেট নির্মাণ করে একটিতে নিজে দোকান করতাম এবং অন্য দুটি দোকান ভাড়া দিয়েছিলাম। ২০১৫ সালে জাহাঙ্গীর আলম পেছনের জমি কিনলেও আমার জমি ছাড়া পেছনে যেতে পারছিলেন না। জাহাঙ্গীরের মামা ও স্থানীয়দের জোরাজুরিতে ৩০ লাখ টাকা মূল্যে ওই জমি বিক্রি করতে রাজি হই। পরে ৫ লাখ টাকা বায়না দিয়ে জাহাঙ্গীর কাজ শুরু করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আর কোনো টাকা দেননি তিনি। তাঁর মায়ের কাছে কয়েকবার গিয়েছি, তারপরও তিনি টাকা দেননি। দেশে এখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সে জন্য আমি জমি দখল করে সেখানে বাঁশের বেড়া দিয়েছি। এর আগে জাহাঙ্গীরের লোকজন দুবার বেড়া ফেলে দিয়েছে। এবার ভালো করে বেড়া দিয়েছি, পাশে সিসি ক্যামেরাও লাগিয়েছি।’
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাকে বর্তমান বাজারমূল্যে টাকা দিলে এবং এত দিন দোকান থেকে আমি যে ভাড়া পেতাম, সেই টাকা দিলে এখনো আমি তাঁকে জমি দিতে রাজি আছি।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে জাহাঙ্গীরের মুঠোফোনে এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মো. রাশেদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগও আসেনি, কেউ সহযোগিতাও চায়নি।’