তামাবিল স্থলবন্দরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শ্রমিক সরবরাহ না করে প্রায় ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম হুসনে আরা এন্টারপ্রাইজ। অভিযানে ভারত থেকে পাথর আমদানি করার ক্ষেত্রেও শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অভিযানে অংশ নেওয়া দুদকের কর্মকর্তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন দুদকের সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার। অভিযানে অংশ নেন দুদক সিলেটের উপসহকারী পরিচালক নিঝুম রায় ও দুদক সিলেটের কোর্ট পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, তামাবিল স্থলবন্দরে মালামাল ওঠানো ও নামানোর কাজে শ্রমিক সরবরাহের কাজ পায় হুসনে আরা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি স্থলবন্দরে শ্রমিক সরবরাহ করে প্রতি টন মালামাল ওঠানো ও নামানোর কাজে ১৪৬ টাকা ৩২ পয়সা করে পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো শ্রমিক সরবরাহ না করেই গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৬ হাজার ৪৬৯ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, ভারত থেকে ব্যবসায়ীরা দেশে পাথর আমদানি করে থাকেন। এসব পাথর আমদানিতে প্রতি টনে ৫৬০ টাকা করে শুল্ক দিতে হয়। আমদানি করা ট্রাকগুলোর ওজন কাগজে-কলমে পাঁচ টন উল্লেখ করা হলেও প্রতিটি ট্রাকে ১০-১২ টন মালামাল আমদানি করা হয়। গড়ে ৬ টন মালামাল শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ট্রাকে ৩ হাজার ৩৬০ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। স্থলবন্দরের তথ্যমতে, প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০টি ট্রাকে মালামাল আমদানি করা হয়ে থাকে। এতে দৈনিক ১৫ লাখ ১২ হাজার টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। অর্থের দিক থেকে এই শুল্কের পরিমাণ ৩ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জড়িত।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক সিলেটের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শ্রমিক নেওয়ার নাম করে যে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, এতে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। এ ছাড়া বন্দরে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জড়িত রয়েছে। বিষয়গুলো প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কেউ বর্তমানে স্থলবন্দরে নেই। এ বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হুসনে আরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এস এম মনিরুজ্জামান শাহিনের মুঠোফোন একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে এ বিষয়ে তামাবিল স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার গৌরব মহাজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। যেখানে পণ্যের ওজন হয়, সেটি দেখে তারা মনে করেছে, আমদানিকারকের ঘোষণা দেওয়া ওজনের শুল্কই আমরা আদায় করছি। প্রকৃতপক্ষে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ওজনের জরিমানাসহ সবকিছুই আদায় করে থাকে। বিষয়টি দুদক কর্মকর্তারা পরে বুঝতে পেরেছেন।’
সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমদানিকারকদের কাছ থেকে তাঁরা কোনো অভিযোগ পাননি। অতিরিক্ত ওজনের পণ্য পরিবহন করলে কাস্টমস নিয়মিত মামলা করে।