মধুপুর ও ধনবাড়ীতে আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থিত প্রার্থীরা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকের নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই দুই উপজেলায় তিনি চেয়ারম্যান পদে দুজনকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগেরই অন্য নেতারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন আব্দুর রাজ্জাকের প্রার্থীরা।
আগামীকাল ৮ মে টাঙ্গাইলের এই দুই উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের কেউ এই নির্বাচনে প্রার্থী হননি। মধুপুরে আওয়ামী লীগের তিন নেতা এবং ধনবাড়ীতে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান ওরফে আবু। গত দুই মেয়াদেই স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থন ছিল তাঁর দিকে। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছরোয়ার আলম খান টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন। এ নিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ভাগ হয়ে যায়। একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। যদিও দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ছরোয়ার আলম খান সংসদ নির্বাচনে আর প্রার্থী হননি। তবে তিনি এবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলের বড় একটি অংশের সমর্থন তাঁর দিকে আছে।
অন্যদিকে চেয়ারম্যান পদে সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন দলের উপজেলা শাখার সহসভাপতি ইয়াকুব আলী। এ ছাড়াও আব্দুর রাজ্জাকের অংশের অপর নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর ফরহাদুল আলম চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই তিন প্রার্থীর দিকে ভাগ হয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
মধুপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ২৩ বছর পর গত শনিবার মধুপুরে যান। তিনি ছরোয়ার আলম খানের পক্ষে গণসংযোগে অংশ নেন। ছরোয়ার আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আমার দিকে আছে। মধুপুরে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলে আমার বিজয় নিশ্চিত।’
আব্দুর রাজ্জাক সমর্থিত প্রার্থী ইয়াকুব আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে ছরোয়ার আলম খান জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেননি। মধুপুরের মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই আমার পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বিজয়ের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী।’
একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মধুপুর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ২১৮ জন। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ধনবাড়ীতে নির্বাচনী মাঠে পাঁচ প্রার্থী
ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক সমর্থন করেছেন দলের উপজেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ ওরফে হীরাকে।
২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হারুনার রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হলেও এবার আরও চারজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাঁকে লড়তে হচ্ছে। তাঁরা হলেন দলের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে তপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ তালুকদার ওরফে সবুজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান ওরফে রনি এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, হারুনার রশিদ আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই। অপর দিকে মঞ্জুরুল ইসলাম আব্দুর রাজ্জাকের মামাতো ভাই। এই উপজেলার নেতা-কর্মীরাও বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ধনবাড়ী উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৫৮ জন। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মতিয়ূর রহমান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা করার চেষ্টা করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, মধুপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াকুব আলী এবং ধনবাড়ী উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুনার রশিদ উভয়েই শিক্ষিত। তাঁরা বিতর্কিত নন। এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে অন্য প্রার্থীদের থেকে অনেক বেশি। তাই জনগণ এই দুজনকে নির্বাচিত করবেন বলে তাঁর আশা।
সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী মধুপুরে একজন প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবুল হাসান চৌধুরী আওয়ামী লীগের কেউ নন। তিনি ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের সমর্থিত দলের নেতা হয়েছিলেন। এখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্য নিয়ে মধুপুরে এসেছেন একজন প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করতে।