রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার ছাত্রদল নেতা নাফিউল ইসলাম ওরফে জীবন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার পর মানসিকভাবে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নির্যাতনের ঘটনায় তিনি কিংবা তাঁর বন্ধু এখনো কোথাও কোনো অভিযোগ দেননি।
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতা নাফিউল ইসলাম ও তাঁর সহপাঠী এক বন্ধুকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর ও পিস্তল ঠেকিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে সোমবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার দুজন হলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাফিউল ইসলাম ও তাঁর সহপাঠী বন্ধু ইউনুস খান। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ওই ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন নাফিউল ইসলাম। সর্বশেষ অবস্থা জানতে আজ বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে নাফিউল বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। আমি চোখের সামনে কোনো দিন পিস্তল দেখিনি, সেদিনই প্রথম পিস্তল দেখেছি। মারধরের ফলে কানের নিচে প্রচুর ব্যথা করছে। আগেও মারধরের শিকার হয়েছি। দলের নেতারা আমার পাশে আছেন। তাঁরা আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন।’
মারধরের পর ভুক্তভোগী দুজনের কেউই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা থানায় এখনো লিখিত অভিযোগ দেননি। এ ব্যাপারে নাফিউলের বন্ধু ইউনুস খান কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাফিউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সহকারী প্রক্টর স্যার আমাকে বলেছিলেন, “তুমি কি এ ব্যাপারে অভিযোগ দিতে চাও?” আমি বলি, কার কাছে অভিযোগ দেব? উত্তরে স্যার আমাকে বলেন, “বাবা, তুমিও জানো, আমিও জানি, আমাদের কিছুই করার নেই। তোমাকে যে এর চেয়ে বেশি টর্চার করেনি, সুস্থ হয়ে আসতে পেরেছ, এটাই শুকরিয়া।” ওই কথা শুনে অভিযোগ দেওয়ার মন–মানসিকতা থাকে না। তারপরও এ ব্যাপারে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’
জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। সহকারী প্রক্টরদের সঙ্গে তাঁর (নাফিউল) কী কথা হয়েছে, তিনি জানেন না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ছাড়া এ ঘটনায় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত অন্য নেতারা হলেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনু মোহন (বাপ্পা), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ শেখ, সাদিকুল ইসলাম (সাদিক), সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান (সোহাগ) ও মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসান। আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও তাঁরা নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন। তাঁদের দাবি, ছাত্রদলের ওই নেতা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে পারেন এমন সন্দেহ থেকে তাঁকে ধরে আনা হয়েছিল। তাঁকে নির্যাতন করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রক্টরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ভুক্তভোগী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত ৯টার দিকে নাফিউল ও তাঁর বন্ধু ইউনুস খান ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান। ক্যাম্পাসে ঘোরার একপর্যায়ে তাঁরা তাপসী রাবেয়া হলের সামনে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারেন, ছাত্রলীগের তিন নেতা তাঁদের অনুসরণ করছেন। তখন তাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে রোকেয়া হলের পেছন দিয়ে ফ্লাইওভার–সংলগ্ন গেট দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। তখন ছাত্রলীগ নেতারা তাঁদের পথরোধ করে মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কক্ষটিতে থাকেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। কিছুক্ষণ পর তিনি কক্ষে ফিরে নাফিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জিজ্ঞাসাবাদে নাফিউল ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত স্বীকার করলে তাঁকে মারধর শুরু করেন গালিব। একপর্যায়ে পিস্তল দেখিয়ে নাফিউলকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তখন নাফিউলের বন্ধু ইউনুস নিজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত জানালে তাঁকেও চড়থাপ্পড় মারেন গালিব। খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে গেলে রাত একটার দিকে তাঁদের প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেওয়া হয়।