মানিকগঞ্জে পড়ে আছে সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার সেতু
জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয় দুই বছর আগে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘদিনে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ) না হওয়ায় কাজে আসছে না সাড়ে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেতুর দুই পাশের অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ।
জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই নদীর খেয়া পার হচ্ছেন দুই পারের অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ। এ সেতু চালু হলে জেলা সদরের সঙ্গে ঘিওর উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে। কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
অধিকরণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন করা যাবে।মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া, উপজেলা প্রকৌশলী
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় সেতুর পূর্ব পারের লোকজন ঘিওর উপজেলা সদরে ও আশপাশের এলাকা এবং পশ্চিম পারের লোকজন জেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহন খেয়ানৌকায় পারাপার হচ্ছেন। এ ছাড়া দুই পারের মানুষ দীর্ঘ পথ হেঁটে অর্থ ব্যয় করে খেয়াঘাটে গিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন।
ঘিওরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালের দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়।
ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স এবং মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণের কাজ পায়। সেতুর নির্মাণকাজে ২৯ কোটি টাকা এবং দুই পাশের সংযোগ সড়ক বাবদ ৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৫ হাজার টাকাসহ মোট ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়।
২০২২ সালের জুন মাসে দুই প্রান্তের সংযোগ সড়কসহ সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়া কথা ছিল। তবে ওই সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হলেও দুই বছরেও দুই পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। দুই পাশের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় মূলত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। দুই পারে ৬৩০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৪.৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সময় চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জমির একজন মালিক বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা এবং অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হলেও ভূমি অধিগ্রহণের টাকা তাঁরা পাননি। আর টাকা না পাওয়ায় জটিলতা এড়াতে তাঁরা জমিতে কাজ করতে দিতে চাইছেন না।
সেতুটি ব্যবহার করতে না পারায় দুই পাশের মানুষজনকে ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সেতুর পূর্ব পাশের পূর্ব উথলী, বৈকুণ্ঠপুর, নকিববাড়ি, সরবঘাট, চর মাইজখাড়া, দোলাপাড়া, চর বিলনালাই এবং সেতুর পশ্চিম পাশের বালিয়াবাধা, আরিয়াদহ, বৈলতলা, মির্জাপুর, বেড়াডাঙ্গা, শিমুলিয়া, আটঘড়িয়া, কেরাননগর, নাটুয়াবাড়ি, আশাপুরসহ অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ উপজেলা এবং জেলা সদরে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
সেতু নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ খান বলেন, দুই পাশের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। এ কারণে সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য যোগদান করা জেলার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) এল আহসানুল হক উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরজাহান আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জেলা প্রশাসনের এল এ শাখায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও অধিগ্রহণের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, অধিকরণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন করা যাবে।