চুয়াডাঙ্গার ২০ ইউনিয়নে উঠান বৈঠক সম্পন্ন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়ন। এখানকার জয়রামপুর গ্রামের মাঠপাড়া নুরুল ইসলামের বাড়ির উঠান। বাড়ির চারপাশে বেড়ে ওঠা বাঁশঝাড় ও গাছগাছালি ভেদ করে নেমে আসে অগ্রহায়ণের মিষ্টি রোদ। ঝলমলে পরিবেশ। বেলা আড়াইটা থেকে গ্রামের নারীরা দল বেঁধে আসতে থাকেন। তিনটা বাজার আগেই উঠানের বসার জায়গা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ঘড়ির কাঁটা তিনটার ঘর ছুঁতেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য সুমাইয়া রহমান ঐশী ‘হ্যালো’ বলার মাধ্যমে সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এদিন বৈঠকে অংশ নেন ১৭২ জন নারী।
গ্রামীণ নারীদের ইন্টারনেট বিষয়ে জ্ঞান বাড়াতে গ্রামীণফোনের প্রচারাভিযান ‘ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার’। এর আওতায় দেশজুড়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে আয়োজিত হচ্ছে উঠান বৈঠক। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ নভেম্বর বেলা তিনটায় মাঠপাড়ার নুরুল ইসলামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় উঠান বৈঠক।
শুরুতেই অংশগ্রহণকারীদের কাছে সঞ্চালক জানতে চান, ইন্টারনেট তাঁরা কী কী কাজে ব্যবহার করে থাকেন? নানা রকম উত্তর পাওয়া গেল। যেমন গৃহিণী উম্মে সালমা বিদেশে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন, আছিয়া খাতুন ইউটিউবে নাটক-গানের ভিডিও দেখেন। আর হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবসর সময় কাটানোর কথা বলেন সোনিয়া আফরিন। রুমানা খাতুন জানালেন, বাড়ির ছোট শিশুটির নানা রকম দুষ্টুমি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন এবং স্বজনের কাছে পাঠান।
তবে তাঁদের চর্চিত কাজ ছাড়াও ইন্টারনেট যে অনেক কিছু শেখার মাধ্যম হতে পারে, তা জানার পর বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠেন অংশগ্রহণকারী নারীরা। একই দিন (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় দামুড়হুদা বাজারপাড়ায় লিটন হোসেনের বাড়িতে অভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গার উঠান বৈঠকের যাত্রা শুরু হয়।
২৫ নভেম্বর সকালে আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠকে এসেছিলেন গৃহিণী স্বপ্না খাতুন। তিনি জানান, প্রতারকেরা কীভাবে তাঁকে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়ার খুদে বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছিল। তাৎক্ষণিক খোঁজ নিয়ে স্বপ্না জানতে পারেন খুদে বার্তাটি ছিল ভুয়া।
স্বপ্না বলেন, ‘বাড়িতে বসে সেলাই মেশিনে শিশুদের পোশাক তৈরি করে সরাসরি বিক্রি করি। উঠান বৈঠক আমার চোখ খুলে দিয়েছে। এবার ইন্টারনেট–সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইনেও বিক্রি শুরু করব।’
উঠান বৈঠক থেকে নানা কিছু শিখেছেন বলে জানান গৃহিণী সোনিয়া খাতুন। কীভাবে নিজে ভালো থাকা যায়, সন্তানকে কীভাবে ভালো রাখা যায়, নিজের ছবি ও তথ্য অন্যকে না পাঠিয়ে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়, প্রতারকদের চেনার উপায় এবং কীভাবে সহজে গ্রামীণফোন ইন্টারনেট কেনা যায়—এসব জানতে পেরেছেন তিনি।
২৬ নভেম্বর সমাপনী দিনের সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের গড়গড়ি গ্রামের স্কুলপাড়ার ফয়েজ মীরের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় উঠান বৈঠক। যেখানে অংশ নেন ১৪৪ জন নারী। অন্যান্য দিনের মতো এই বৈঠকেও গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোগসহ ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার শুরু করতে সাহস ও উৎসাহ জোগানো হয়। গৃহিণী রিজিয়া খাতুন, নিপা খাতুন, ফিরোজা খাতুন, সুলতানা খাতুন ও কুলসুম আক্তার কুইজের সঠিক উত্তর দিয়ে পুরস্কার জেতেন। এদিনের উঠান বৈঠকের মাধ্যমেই ২৬ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলায় মোট ২০টি ইউনিয়নে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে তিন হাজারের বেশি গ্রামীণ নারী অংশগ্রহণ করেন।
মানুষের নানাবিধ চাহিদা ও প্রয়োজন মেটাতে ইন্টারনেট যে সক্ষম, সে বিষয়টি তৃণমূলের নারীদেরকে সরাসরি শেখাতেই ‘ইন্টারনেট দুনিয়া সবার’ উদ্যোগ। প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভার স্থানীয় সদস্যদের সহযোগিতায় সারা দেশের দুই হাজারের বেশি ইউনিয়নে চলছে উঠান বৈঠক। গ্রামীণফোনের এই উদ্যোগটি আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো, নকিয়া ও ঢাকা ব্যাংক পিএলসি। ২০২৩ সালের মার্চে শুরু হওয়া কার্যক্রমটির আওতায় গতকাল ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৮টি ইউনিয়নে উঠান বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে।