‘মেট্রোরেলে চড়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে’ প্রতিমা–দর্শন
সাতক্ষীরায় এবার ৬৬৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রমী সাজসজ্জা ও দৃষ্টিনন্দন প্রতিমার জন্য বেশ কিছু মণ্ডপ পরিচিতি পেয়েছে। আশাশুনির হাড়িয়াভাঙ্গায় কৈলাস পর্বতের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপের তোরণ। উপজেলার মহেশ্বরকাটিতে মণ্ডপে যেতে হচ্ছে মেট্রোরেলে চড়ে ও পদ্মা সেতুর আদলে গড়ে তোলা স্থাপনা পার হয়ে।
কলারোয়ার মুরারীকাটি উত্তর পালপাড়ায় চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে তৈরি মণ্ডপের তোরণ ও প্রতিমা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে দর্শনার্থীদের। এ ছাড়া দেবহাটার পারুলিয়ায় তৈরি করা হয়েছে ফেলে দেওয়া বোতল দিয়ে ভারতের কেদারনাথ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তোরণ। জেলার বাইরে থেকেও এসব মণ্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
গত শুক্রবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। আজ সোমবার মহানবমী। আশাশুনির মহেশ্বরকাটি সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড়। মণ্ডপটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন দর্শনার্থীরা মেট্রোরেলে চড়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে যাবেন মণ্ডপে। মহেশ্বরকাটি পূজা উদ্যাপন কমিটির আনাঙ্গ মণ্ডল জানান, ২ মাস ১০ দিন সময় লেগেছে প্রতিমা ও অভিনব এই মণ্ডপ তোরণ তৈরি করতে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের আদলে মণ্ডপ ও তোরণ তৈরিতে খরচ হয়েছে সাত লাখ টাকা। আর প্রতিমা তৈরিতে খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। খরচ বেশি হলেও দর্শনার্থীদের সন্তুষ্টি ও আনন্দে তাঁরা খুশি।
মহেশ্বরকাটি গ্রামের ভবতোষ মণ্ডল জানান, ‘ব্যতিক্রমী মণ্ডপ ও তোরণ তৈরি করায় আমাদের গ্রামের নাম এখন মানুষের মুখে মুখে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছে তোরণ ও প্রতিমা দেখতে। আত্মীয়স্বজনও আসছেন বাড়িতে।’
একই উপজেলায় হাড়িয়াভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কৈলাস পর্বতমালায় কেদারনাথ মন্দিরের আদলে নির্মিত তোরণ ও পাহাড়ের গুহার মধ্যে নির্মিত প্রতিমা দর্শনে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। হাড়িয়াভাঙ্গা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি গোপাল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক হরলাল সরকার জানান, প্রায় তিন মাস ধরে সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপের তোরণ। পাশাপাশি প্রতিমা তৈরিতে খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকার মতো।
হাড়িয়াভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার মণ্ডল বলেন, পূজা উদ্যাপন কমিটির তৈরি তোরণ দৃষ্টি কেড়েছে সবার। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তো বটেই, পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও মণ্ডপ পরিদর্শন করে আনন্দ পাচ্ছেন।
ফেলে দেওয়া বোতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দেবহাটার পারুলিয়া দাসপাড়া পূজামণ্ডপ। মন্দির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। কমিটির সভাপতি সঞ্জীব কুমার দাস জানান, প্রায় তিন মাস ধরে তাঁরা নিজেরাই মণ্ডপটি তৈরি করেছেন। অর্ধলক্ষাধিক ফেলে দেওয়া বোতল দিয়ে তৈরি করেছেন ভারতের কেদারনাথ মন্দিরের আদলে তোরণ। এখানে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে নান্দনিক শৈল্পিক নিদর্শন। তোরণ তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
পারুলিয়ার বাসিন্দা অশোক মণ্ডল বলেন, প্রতিবছর এখানকার পূজামণ্ডপের তোরণ দেখতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসেন। এবারের তোরণ অন্যবারের চেয়ে আরও আকর্ষণীয় হয়েছে।
চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে তৈরি পূজামণ্ডপটি কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি উত্তর পালপাড়ায় অবস্থিত। চিনিগুঁড়া ধানের কারুকাজে নির্মাণ করা প্রতিমাগুলো যেন সোনা দিয়ে মোড়ানো। পুঁতির মতো একটা একটা করে ধান দিয়ে গেঁথে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমার অবয়ব।
জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, সাতক্ষীরায় এবার ৬৬৫টি পূজামণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় দশমীর মাধ্যমে দেবীর বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠুভাবে উদ্যাপন করা হয়, এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপে আনসার, গ্রাম পুলিশসহ পুলিশের একাধিক দল টহলে রাখা হয়েছে।