জাহাঙ্গীরনগরে সাতটি ফটকে ছাত্রদলের তালা, ভাঙলেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকে তালা লাগানো থাকায় গাড়িটিকে থেমে থাকতে হয়। বুধবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সাতটি ফটকে তালা দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী এসে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর সকাল আটটার পর পাঁচটি ফটকের তালা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভেঙে ফেলেন। আর বাকি দুটি ফটকের তালা ভাঙে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়ে ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে দেন। তালার সঙ্গে ‘সর্বাত্মক অবরোধ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল’—লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দেন তাঁরা।

সকাল পৌনে ৮টা থেকে ৮টার মধ্যে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক, প্রধান ফটক, আমবাগান ফটক, মীর মশাররফ হোসেন হল ফটক, বিশমাইল ফটকে তালা ঝুলছে। এ সময় আমবাগান ফটকের উভয় পাশেই রিকশা ও প্রাইভেট কারের জট তৈরি হয়। ফটকগুলোতে লোহার শিকল পেঁচিয়ে তালা দিয়ে প্ল্যাকার্ডটি ঝুলিয়ে রাখা। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, সাতটি ফটক কিছুক্ষণ তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। তবে আমবাগান এলাকাসংলগ্ন ফটক প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা তালাবদ্ধ ছিল।

ফটকগুলোতে তালা লাগানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা নাইমুল হাসান বলেন, ‘সরকার যত বেশি বাধা ও হামলা-মামলা দেবে, সরকারের ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের পতন তত ভয়ংকর হবে। আমরা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথেই মোকাবিলা করব। আজকের এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ফাউ খাওয়া বন্ধ করে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিগত দিনের অন্যায়ের জন্য জাতির কাছে তাদের ক্ষমা চেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। অন্যথায় তাদের রাজপথে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আমবাগান ফটকে তালা দেওয়া। বুধবার সকাল ৭টা ৫৪ মিনিটে
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রদলের আরেক নেতা জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘সরকারের পতনের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন রয়েছে। তাই তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা জাবির প্রবেশ দুয়ারে তালা লাগিয়েছি।’

ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী ফটকের তালাগুলো ভাঙার সময় উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কেউ যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য জাবি ছাত্রলীগ সর্বদা প্রস্তুত। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কিছু লোক আজ সকালে ফটকে তালা দিলে আমরা সেগুলো প্রতিবাদ করে ভেঙে ফেলেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কাজেই সকালে বের হয়েছিলাম। মীর মশাররফ হোসেন হলের ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় দেখি, ফটক তালাবদ্ধ। পরে প্রধান ফটকে এসে দেখি, সেখানেও তালা দেওয়া হয়েছে এবং ছাত্রদলের ব্যানার ঝুলছে। তবে কারা তালা লাগিয়েছে, আমাদের চোখে পড়েনি। আমি দ্রুত তালা ভেঙে ফেলতে বলেছি। কারণ, এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো প্রবেশ করবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্যই নিরাপত্তা অফিসকে দ্রুত সব তালা ভেঙে ফেলতে বলেছি।’