সিলেটে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার পুলিশ কর্মকর্তাকে আদালত প্রাঙ্গণে কিল–ঘুষি, আওয়ামী লীগ নেতাও হামলার শিকার
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার পুলিশ কর্মকর্তা সাদেক কাউসার দস্তগীরের ওপর আদালত চত্বরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে হাজির করার সময় তাঁকে কিল-ঘুষি মারেন উপস্থিত লোকজন। একই দিন ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এক আওয়ামী লীগ নেতাও আদালত চত্বরে হামলার শিকার হয়েছেন। আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।
এদিকে তুরাব হত্যা মামলায় সাদেক কাউসার দস্তগীরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত-১–এর বিচারক আবদুল মোমেন শুনানি শেষে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুর রব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাদেক কাউসার আন্দোলন চলাকালে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি শেরপুরের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে কর্মস্থল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সাদেক কাউসার দস্তগীরকে আদালতে হাজির করার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সিলেটে আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে পুলিশ। দুপুরের পর থেকেই আদালত এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে পিবিআই সিলেট কার্যালয় থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাদেক কাউসার দস্তগীরকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। এ সময় উৎসুক জনতা স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা সাংবাদিক হত্যার বিচার এবং সাদেক কাউসার দস্তগীরের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদেক কাউসারকে আদালতে তৃতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কিল-ঘুষি মারেন অনেকে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। পরে আদালতে শুনানি শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তৃতীয় তলা থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও কিল-ঘুষির শিকার হন সাদেক কাউসার। পরে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নিরাপত্তার সঙ্গে তাঁকে পিবিআই সিলেট কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ১৯ জুলাই দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। এ সময় বিএনপি আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করলে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের ছোড়া গুলিতে দায়িত্বরত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব আহত হন। পরে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় এর আগে সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক পুলিশ কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।
আওয়ামী লীগ নেতাও হামলার শিকার
এদিকে সিলেটে ছাত্রদল নেতা খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেনও আদালত প্রাঙ্গণে মারধরের শিকার হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে আমির হোসেনকে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় বিক্ষোব্ধ লোকজন তাঁকে মারধর করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে হাজতে নিয়ে যান। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সেখান থেকে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো করা হয়।
সিলেটের বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়েজ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, আমির হোসেনকে আদালতে পাঠানো হলে হামলার শিকার হয়েছেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুস্থ হলে পরবর্তী সময়ে আদালতে পাঠানো হবে।
২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। আমির হোসেন ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামি। গত বুধবার রাতে সিলেট নগরের মিরের ময়দান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর আগে সীমান্তে আটক হওয়ার পর সিলেটের আদালতে তোলার সময় গত ২৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
আদালতে আসামিদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) বিএম আশরাফ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে বাদী ও বিবাদীসহ বিচারপ্রার্থী যারা আসেন তাদের নিরাপত্তা দিতে মহানগর পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটান সে ব্যাপারে আদালত প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের মানুষকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান।