পরিবারের অভিযোগ, তিতাসে ইউপি চেয়ারম্যান মনির হত্যা মামলা তুলে না নেওয়ায় জামালকে হত্যা

জামাল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনির হোসাইনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে নানাভাবে হুমকি ও চাপ দেওয়া হচ্ছিল। ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন। তাঁর পরামর্শে তাহমিনা মামলাটি তুলে নিচ্ছেন না বলে আসামিরা মনে করছিলেন। যে কারণে জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।

বুধবার দুপুরে জামাল হোসেনের বোন জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রিপা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনির হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমার ভাইকে হুমকি দিচ্ছিলেন আসামি ও তাঁদের লোকজন। মামলা তুলে না নেওয়ায় আমার ভাইকে হত্যা করা হয়।’

এ ছাড়া জিয়ারকান্দি ও নোয়াগাঁও এলাকায় জামাল হোসেনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরাও একই অভিযোগ করেন।

আরও পড়ুন

জামাল হোসেন হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বিকেলে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসা–বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্ব। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছি।’

তদন্তের স্বার্থে মামলার এজাহারের কপি কাউকে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, মামলার আসামি কারা তা এখনই বলা ঠিক হবে না। তবে মামলার তদন্ত এগোচ্ছে।

গত রোববার রাত আটটার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিমবাজারের ভাড়া বাসার সামনের সড়কে জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরে আসা তিন দুর্বৃত্ত। ঘটনার দুই দিন পর গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে নয়জনের নাম উল্লেখ এবং সাত থেকে আটজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সাড়ে ছয় বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনির হোসাইনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি কুমিল্লার আদালতে বিচারাধীন।

তাহমিনা আক্তার আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘মনিরের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে ও জামালকে হুমকি দিচ্ছিলেন আসামিরা। তাঁরা গত বছরের অক্টোবর মাসে আমার ঢাকার বাসায় এসে হুমকি দেন। এরপর গত বছরের ২ নভেম্বর কুমিল্লার আদালতে আমাকে ও জামালকে হুমকি দেন। জামালের গায়েও হাত তোলেন তাঁরা। তাঁদের কারণে দুই বছর ধরে আমি তিতাসে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারি না। মনিরের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন জামাল। জামালই মামলাটাকে এগিয়ে নিয়েছেন। আমার স্বামীর হত্যা মামলায় সহযোগিতা করায় তাঁকে খুন হতে হলো।’

তিতাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, ‘জামালকে তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদার (শাহিনুল ইসলাম) খুন করিয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে আরও খুন হবে। তিতাসের পরিস্থিতি প্রশাসনকে আগেই জানিয়েছিলাম। তাঁরা সোহেল শিকদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। তিতাসের মানুষ জিম্মি সোহেল শিকদার বাহিনীর কাছে। আমি দুই মাস এলাকায় যাই না। আমাকেও হুমকি দিয়েছেন সোহেল শিকদার।’

বুধবার দুপুরে গোমতী নদীর উত্তরপাড়ে জিয়ারকান্দি ও নোয়াগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজনের চলাচল কম। জামাল হোসেনের বাড়িতে বিরাজ করছিল শোকার্ত পরিবেশ। তাঁর স্ত্রী পপি আক্তার কারও সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলেন না।

জামাল হোসেনের বোন ইউপি সদস্য রিপা আক্তার বলেন, ‘পপি কথা বলার মতো অবস্থা নেই। মামলা হয়েছে। ও শুধু সই করেছে। কারা আসামি আমরা জানি না। হত্যার সময় ইসমাইল নামের একজন আমার ভাইয়ের গলা ধরে রাখেন। একজন ইজিবাইকে দিয়ে পথ আটকে রাখেন। হত্যাকাণ্ডের সময় যাঁর মাথা থেকে বোরকার নেকাব পড়ে গিয়েছিল, তাঁর নাম আরিফ।’

জিয়ারকান্দি এলাকার অন্তত তিন ব্যক্তি বলেন, কয়েক মাস পরপরই এই এলাকায় খুনাখুনি হয়। পুলিশসহ সবাই জানে কারা এসবের জন্য দায়ী। কিন্তু কোনো কিনারা হচ্ছে না।