ছাত্রজীবনে বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ার টাকা পরিশোধ করলেন প্রবাসী
ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে বহুবার বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন মো. আবদুল কাইয়ুম মিয়া (৪৪)। ওই সময় পকেটে টাকা না থাকায় এবং সচেতনতার অভাবে তিনি এমনটা করতেন বলে তাঁর ভাষ্য। দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটিয়ে দেশে ফেরার পর তাঁর বোধোদয় হয়। চার বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে স্টেশনে এসে ট্রেনভ্রমণ বাবদ বকেয়া এক হাজার পাঁচ টাকা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে বুঝিয়ে দেন তিনি। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আজ রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
আবদুল কাইয়ুম মিয়া নরসিংদীর শিবপুরের কুমরাদি এলাকার বাসিন্দা।
বিনা টিকিটে ভ্রমণ করে বিবেকের তাড়না থেকে ভাড়া পরিশোধের ব্যতিক্রম এ ঘটনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রেলওয়েসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণের প্রতি সচেতনতা বাড়বে বলে তারা আশা করছে।
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তারা বলেন, কাইয়ুম কতবার বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। তাই অনুমান করে এই টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবহার না করার শর্তে ১৫ টাকা মূল্যের ৬৭টি আজকের দিনের টিকিট দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এর দাম আসে এক হাজার পাঁচ টাকা। এই টাকা নগদ পরিশোধ করে দায়মুক্তি নিয়েছেন তিনি। টিকিট কেটে পরিশোধ করা এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সাইদুল ইসলাম, প্রধান বুকিং সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ মো. মুরশিদ মোল্লা প্রমুখ।
কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০ বছর আগে আমি নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলাম। ওই সময় বহুবার এমন হয়েছে, আনন্দের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেনে চড়ে বসতাম। বেশির ভাগ সময়ই আমরা রাজধানী ঢাকায় চলে যেতাম, ঘুরেফিরে ফিরতি ট্রেনে আবার চলে আসতাম। ওই সময় আমরা কেউ ট্রেনের টিকিট কাটার কথা ভাবতামই না। তবে সম্প্রতি ওই সময়কার বিনা টিকিটে ট্রেনভ্রমণের স্মৃতি আমার মনে অনুশোচনা তৈরি করছিল। দেড় বছর আগে একবার চেষ্টা করেছিলাম, সম্ভব হয়নি। এবার দেশে ফেরার পর সিদ্ধান্ত নিই, যেভাবেই হোক স্টেশনে গিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনভ্রমণের ভাড়া আমাকে পরিশোধ করতেই হবে।’
কাইয়ুম বলেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি জর্ডান থেকে দেশে ফিরে স্ত্রীকে বিষয়টি বলেন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দেন। আজ দুপুর ১২টার দিকে ছেলে আবু সাইদকে নিয়ে তিনি শিবপুর থেকে নরসিংদী রেলস্টেশনে যান। পুরো বিষয়টি জানিয়ে কর্তব্যরত জিআরপি পুলিশের সহায়তা চান। তারা তাঁকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে। কাইয়ুম বলেন, ‘আমি অনুশোচনা থেকে মুক্তি পেয়েছি, শান্তি লাগছে।’
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আবদুল কাইয়ুম মিয়া সচেতনতার পরিচয় দিলেন। তাঁকে টিকিটগুলো ছিঁড়ে ফেলতে বলেছি আমরা। রেলওয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’