নোয়াখালীতে মা-মেয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এখনো প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হয়নি
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে দুর্গম চরে মা ও মেয়েকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এখনো প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তবে এ ঘটনায় পুলিশ এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে ধর্ষণের শিকার নারী ও তাঁর মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা গতকাল রোববার পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এ কারণে তাঁদের গতকাল পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। আজ তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিস্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হবে। পরে সেখান থেকে জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য তাঁদের নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হবে। আজ সোমবার সকালে মুঠোফোনে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবের একাধিক দলও কাজ করছে। গতকাল রাতে একাধিকস্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু আসামিরা বারবার অবস্থান পরিবর্তন করায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
২১ অক্টোবর রাতে ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী (৩৫) ও তাঁর মেয়ে (১৭)। গত শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে মৌখিকভাবে ঘটনা জানালে পুলিশ ওই নারীকে থানায় নিয়ে যায়। তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এতে মো. ইব্রাহিমকে এক নম্বর আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখ করেন। অন্য আসামিরা হলেন সাইফুল ইসলাম, মো. রাজিব ওরফে রাজু, মহম্মদ রাশেদ, মো. হারুন ও মো. হাসান। ইব্রাহিম চর এলাহী বিএনপির সাবেক সভাপতি (যিনি ৫ আগস্টের পর খুন হয়েছেন) আবদুল মতিন ওরফে তোতা চেয়ারম্যানের ছেলে এবং তাঁর বড় ভাই ইসমাইল চর এলাহী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি। আসামিরা স্থানীয় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মো. হারুন ও মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২১ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মো. ইব্রাহিমসহ ছয়জন ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ওই নারী ও তাঁর মেয়েকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই নারী পরদিন বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তাঁরা সালিসের নামে কালক্ষেপণ করেন। পরে তিনি শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে মৌখিকভাবে ঘটনা জানালে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়।
এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন তিনি, তাঁর মেয়ে, ফুফাতো দেবরসহ রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মা–মেয়ে ঘরের ভেতর এবং তাঁর দেবর ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে আসামিরা ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁকে ও তাঁর দেবরকে মারধর করে। এ সময় আসামি ইব্রাহিম, সাইফুল ও রাজিব ওরফে রাজু তাঁর কাছে টাকা দাবি করে। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে এলাকায় বদনাম রটিয়ে সালিস-দরবার বসানোর হুমকি দেয়। মেয়ের বিবাহবিচ্ছেদ বাবদ পাওয়া ৭০ হাজার টাকা বাড়িতে ছিল। সেই টাকা তাদের হাতে তুলে দেন। টাকা পাওয়ার পর আসামিরা তাঁর মেয়েকে বসতঘরের পাশে রান্নাঘরের পেছনে এবং তাঁকে পুকুরপাড়ে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় তাঁর দেবরকে ঘরে বেঁধে রাখা হয়। পরে আসামিরা ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দিয়ে চলে যায়।