সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামানের দখলে থাকা জমির দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামার গ্রামের বাসিন্দা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার দখলে থাকা ১৫ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত দুটি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের টিটিসি মোড় এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে দোকান দুটি ভেঙে দেওয়া হয়। যাঁরা দোকান ভেঙে দিয়েছেন, তাঁরা এই জমির প্রকৃত মালিক বলে দাবি করেছেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৭ সাল থেকে চান্দড়া মৌজার ১৫ শতাংশ জমি কিনে ভোগদখল করে আসছিলেন কামারগ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মিয়া। এই জমির পাশেই আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে জমি আছে। এই জমির সুবাদে আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার জমি নানাভাবে দখলের চেষ্টা করেন আছাদুজ্জামান মিয়া। পরে আদালতে মামলা হলে সেই মামলায় রায় আসে আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার পক্ষে। কিন্তু সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০১৭ সালে পুলিশ দিয়ে নানাভাবে হয়রানির মাধ্যমে আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার কেনা ১৫ শতাংশ জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার ছোট ছেলে এস এম রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘১৫ শতাংশ জমি ক্রয়সূত্রে আমার বাবা ১৯৯৭ সাল থেকে ভোগদখল করে আসছিলেন। আমাদের জমি সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া দখলে নিতে নানাভাবে আমাদের হয়রানি করেন। একপর্যায়ে আদালতে মামলা হলে ২০১০ সালে রায় হয়। সেই রায় আমাদের পক্ষে আসে। তখনো আমরা দখলে ছিলাম। ২০১৭ সালে আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ার কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের নামে নানা ধরনের মিথ্যা মামলা, পুলিশি হয়রানি করে অবৈধভাবে জোর করে দখলে নিয়ে দুটি দোকান নির্মাণ করেন। আজ আমরা আমাদের জমিতে থাকা অবৈধ দোকান ভেঙে দিয়ে আমাদের জায়গা অবমুক্ত করেছি।’
গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. টিটন বলেন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকে তিনি এলাকায় কম আসতেন। তাঁর হয়ে সবকিছু দেখতেন তাঁর ভাগনে মো. ইব্রাহিম। কমিশনার থাকাকালে আছাদুজ্জামান মিয়া তাঁর স্ত্রী, শ্যালিকা, শ্যালক, ভাগনে-ভাগনিসহ স্বজনদের নামে জমি কিনেছেন। এ ছাড়া এলাকার অনেকের কাছে থেকে পুলিশি ক্ষমতা ব্যবহার করে জমি লিখে নিয়েছেন। যদি কেউ জমি দিতে না চাইতেন, তাহলে তাঁকে থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়ার ভাগনে মো. ইব্রাহিম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, চারটি দাগে ওখানে তাঁদের ও রাজ্জাক মিয়াদের জমি আছে। তাঁরা তাঁদের জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগে তাঁদের নির্মাণ করা ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটি দোকান গুদামঘর হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল, যা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাধা দিতে গেলে মার্ডার হয়ে যেত, এ জন্য বাধা দিইনি।’