আমতলী-ঢাকা পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ
লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে স্বল্প খরচে দক্ষিণাঞ্চলে মালামাল আনা-নেওয়া করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে চলাচলকারী নৌযানগুলোতে যাত্রী কমে গেছে। যাত্রীসংকটের কারণে প্রায় আড়াই মাস ধরে আমতলী-ঢাকা রুটে নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে অনেকে সড়কপথের চেয়ে লঞ্চযাত্রা এখনো বেশি সুবিধাজনক করেন। তাঁদের ভাষ্য, লঞ্চে কম খরচে যাত্রীরা ঢাকায় যেতে পারেন। অল্প খরচে মালামাল আনা-নেওয়া করা যায়। লঞ্চ বন্ধ থাকায় এই যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
যাত্রীসংকটে লোকসানের মুখে প্রায় তিন মাস ধরে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ করে রেখেছি। ওই রুটে দৈনিক এক লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। এত লোকসানে আর পারছি না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়া পর থেকেই ঢাকা-আমতলী পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমতে থাকে। যাত্রীসংকট চরম আকার ধারণ করায় আমতলী-ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ে। চলতি বছরের ২০ জুলাই লঞ্চমালিকেরা আমতলী-ঢাকা নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে দক্ষিণাঞ্চলের আমতলী, তালতলী, বরগুনা সদর, কলাপাড়া ও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা নৌপথের যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়েই তাঁরা সড়কপথে চলাচল শুরু করেন। লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে স্বল্প খরচে দক্ষিণাঞ্চলে মালামাল আনা-নেওয়া করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে বেশি খরচ দিয়ে তাঁদের মালামাল আনতে হচ্ছে। এতে পণ্যের দামের ওপরে এর প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আমতলীর যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এর বাইরে বরগুনা-ঢাকা নৌপথেও যাত্রীসংকটের কারণে গত ২২ আগস্ট লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছিল মালিক কর্তৃপক্ষ। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ৩১ আগস্ট থেকে পুনরায় ঢাকা-বরগুনা নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়।
গত রোববার আমতলী লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, সুনসান নীরবতা। নেই যাত্রীদের কোলাহল। লঞ্চ টার্মিনাল ফাঁকা। টার্মিনালে জেলেনৌকা ও বালু জাহাজ বাঁধা। সবুজ, কামরুল ও শাহ আলম নামের আমতলী পৌর শহরের তিন শ্রমজীবী বলেন, কাজের সন্ধানে ঢাকা যেতে হয়। কিন্তু লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ার যাতায়াতে খুব সমস্যা হচ্ছে। আমতলী পৌর এলাকার বাসিন্দা হিরামণি আক্তার বলেন, ‘অসুস্থ থাকায় গাড়িতে উঠতে পারি না। তাই লঞ্চে করে ঢাকায় যেতাম। এখন লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যা পড়েছি।’
আমতলী মাতৃছায়া বস্ত্রালয়ের মালিক জি এম মুছা বলেন, ‘অল্প খরচে ঢাকা থেকে আমরা মালামাল নিয়ে আসতাম। কিন্তু লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশি খরচে সড়কপথে মালামাল আনতে হচ্ছে। দ্রুত লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানান তিনি।
আমতলী লঞ্চঘাট সুপারভাইজার শহীদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় আমতলী লঞ্চঘাটের অন্তত অর্ধশত শ্রমিকদের উপার্জন কমে গেছে। তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
জানতে চাইলে আমতলী-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী এমভি ইয়াদ লঞ্চের মালিক মামুন-অর রশিদ বলেন, ‘যাত্রীসংকটে লোকসানের মুখে প্রায় তিন মাস ধরে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ করে রেখেছি। ওই রুটে দৈনিক এক লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। এত লোকসানে আর পারছি না।’ তবে তিনি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে লঞ্চ পুনরায় চালুর কথা ভাবছেন।
বরগুনা নদীবন্দর কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীসংকটের কারণে আমতলী-ঢাকা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। আসছে শীত মৌসুমে আবার লঞ্চ চলাচল শুরু সম্ভাবনা রয়েছে।