ট্রেনের নিচে পড়ে কাটা গেল নারীর দুই পা, বুকে জড়ানো নাতনি অক্ষত
প্রায় ২০ বছর ধরে স্টেশনে ওঠাবসা বুলু বেগমের (৪৫)। প্ল্যাটফর্মে ভাতের হোটেল চালান। তিনি জানেন, সকালে তিন নম্বর লাইনে কোনো ট্রেনে আসে না। তাই নাতনি রাবেয়াকে কোলে নিয়ে নিশ্চিন্তেই রেললাইন পার হচ্ছিলেন। কিন্তু ওই লাইনেই চলে আসে ট্রেন। নাতনিকে বুকে জড়িয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে যান বুলু।
ট্রেন যাওয়ার পরে দেখা গেল, বুলু বেগমের দুই পা ঊরু থেকে কেটে গেছে। তবে বুকে জড়ানো চার বছর বয়সী রাবেয়ার কিছু হয়নি। আজ শনিবার সকাল আটটার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। বুলু বেগমকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বুলু বেগমের বাড়ি আড়ানি পৌর এলাকার নুননগর মহল্লায়। তাঁর স্বামী রব্বেল আলী স্টেশনে কুলির কাজ করতেন। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। এরপর তিনি স্টেশনে ভাতের হোটেল চালু করেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুলুর সঙ্গে এসেছেন তাঁর ছেলে জুয়েল রানা। আজ বেলা একটার দিকে হাসপাতালে কথা বলার সময় জুয়েল রানা জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাঁর মায়ের অস্ত্রোপচার চলছে। তিনি বলেন, ভাতের হোটেল চালিয়ে তাঁদের আট ভাইবোনকে মানুষ করেছেন মা। এখন তাঁরাও মায়ের সঙ্গে হোটেলে কাজ করেন। হোটেলের সঙ্গে চায়ের দোকানও করেছেন।
জুয়েল রানা বলেন, তাঁর ভাই সোহেল রানার মেয়ে রাবেয়া মায়ের কোলে ছিল। ট্রেনের ধাক্কায় মা রাবেয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরেই নিচে পড়ে যান। ঘটনাটি ঘটেছে স্টেশনের পূর্ব দিকে। ট্রেন পার হয়ে যাওয়ার পরে দেখা যায়, মায়ের কোমরের নিচ থেকে দুই পা কেটে পড়ে গেছে। কিন্তু রাবেয়ার কোনো ক্ষতি হয়নি। জুয়ের রানা তাঁর মায়ের জন্য দোয়া চান।
আড়ানি স্টেশনে তিন নম্বর লাইনে সকালে কোনো ট্রেন যায় না। আজ ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্টেশনমাস্টার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন আজ রাজশাহী থেকে আসতে দেরি করে। প্রতিদিন সাড়ে সাতটার মধ্যে ট্রেনটি আড়ানি স্টেশনে আসে। বিলম্বের কারণে তাঁদের বার্তা দেওয়া হয়েছিল যে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে আড়ানিতে রেখে বনলতাকে পার করে দিতে হবে। একই সময়ে ঈশ্বরদী থেকে কমিউটার ট্রেনটি আড়ানি স্টেশনে পৌঁছাবে। এই জন্য সিল্কসিটিকে এক নম্বরে, বনলতার জন্য দুই নম্বর ফাঁকা রেখে কমিউটারকে তিন নম্বরে নেওয়া হয়। সাধারণত তিন নম্বরে এই ট্রেন যায় না। এই জন্য সকালে কয়েক দফা মাইকে বলা হয়েছে যে কমিউটার ট্রেনটি তিন নম্বর লাইনে ঢুকছে।
গতকাল শুক্রবার বুলুর হোটেলে ভাত খেয়েছেন স্টেশনমাস্টার মোশাররফ হোসেন। তিনি খুব ভালো করেই বুলুকে চেনেন উল্লেখ করে বলেন, গতকাল বুলুর এক ছেলের বিয়ে ছিল। এই জন্য আজ সকালে ভাতের হোটেল খোলেননি। হয়তো অন্য কোনো কাজে স্টেশনে এসেছিলেন। ঘটনাটি স্টেশন থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১০০ হাত দূরে ঘটেছে। পরে তিনি লোকমুখে জানতে পেরেছেন।