শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে সমালোচনা, ক্ষমা চাইলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা

কিশোরগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। আজ রোববার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া সেই মুক্তিযোদ্ধা দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া আজ রোববার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার কে এম মাহবুব আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম, সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণিসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আমি আমার বক্তব্যে অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল করেছি। সেই ভুলগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি ভুলবশত বলে ফেলেছি, এই ব্যাপারে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এই ব্যাপারে কারও মনে আঘাত লাগলে, আমি সকলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদ আমাদের সন্তানের মতো। আবু সাঈদ যদি শহীদ না হতো, আজকে বাংলাদেশের এই পটপরিবর্তন হতো না। আবু সাঈদের শাহাদাতকে আমি সম্মান করি। তার এই আত্মত্যাগে আমরা যেন সমৃদ্ধির দিকে যেতে পারি, এই কামনা করি।’

প্রসঙ্গত, ১৬ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা ছিল। সেখানে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে আলোচক হিসেবে ইদ্রিস আলী বিজয় দিবসের পোস্টারে শহীদ আবু সাঈদের ছবি দেওয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘বিজয় দিবসের পোস্টারে আবু সাঈদের ছবি না দিয়ে যদি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি দেওয়া হতো, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। আবু সাঈদ শহীদ হইছে, কার সাথে যুদ্ধ করে শহীদ? কোন দেশের সাথে তারা যুদ্ধ করেছে? তারা আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে, দেশটাকে এক হাত থেকে আরেক হাতে পরিবর্তন করছে। তারা এখন আমাদের শাসন করবে। আমরা তাদের শাসন মেনে নিব। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, বিজয় দিবসে কেন রাস্তাঘাটসহ সব জায়গায় আবু সাঈদের ছবি?’ পরে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ জেলায় নানা আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া হয়।

এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ১৮ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তারের জন্য ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেও জেলা প্রশাসক এ বক্তব্যের প্রতিবাদ না করায় জেলা প্রশাসকেরও প্রত্যাহারের দাবি করেন। এ পরিস্থিতিতে ১৮ ডিসেম্বর রাতে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে তাঁর বাসভবনে বৈঠক করেন। জেলা প্রশাসক ১৬ ডিসেম্বর ঘটনার জন্য ছাত্র নেতাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বিতর্কিত ওই বক্তব্যের জন্য সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরদিন ১৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়ার বক্তব্য পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান।  

এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া।