নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে উপাচার্যসহ ৪ জনের নামে আদালতে মামলা

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি : সংগৃহীত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। ইসরাত জাহান নামের এক ভুক্তভোগী গত মঙ্গলবার পটুয়াখালীর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী হুমায়ূন কবির বলেন, এই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান একই ব্যক্তি। আদালত মামলার পরবর্তী তারিখ ১০ মার্চ অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য বিবাদীদের নোটিশ দিয়েছেন।

মামলার বিবাদীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত, রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমার বসু, ট্রেজারার মোহাম্মদ আলী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর সেকশন অফিসার পদে একজন এবং ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর তিনজনসহ অন্যান্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। মামলার বাদী ঢাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান সেকশন অফিসার পদের জন্য আবেদন করেন। সাক্ষাৎকারের চিঠি পেয়ে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হয়ে সাক্ষাৎকার দেন। তিনি যোগ্য প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও নিয়োগ বাছাই বোর্ড কোনো পরীক্ষা না নিয়ে ছয়জনকে বিধিবহির্ভূতভাবে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেয়। এতে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন।

মামলায় বাদী অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য একাধিক বাছাই বোর্ড গঠন করে প্রশাসন। বিধিমোতাবেক নিয়োগ বোর্ড কমিটির চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান করা হয় ট্রেজারার মোহাম্মদ আলীকে। রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমার বসুকে সদস্যসচিব এবং অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হয়।

অবৈধভাবে লাভবান হয়ে ২০২৩ সালের ১ ও ২ নভেম্বর এবং ৪ ও ৭ নভেম্বর নিয়মবহির্ভূতভাবে দুটি বাছাই বোর্ড কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ছেলে শাওন চন্দ্র সামন্ত, উপরেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমানের ছোট ভাই মো. আরিফুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক মেহেদী হাসানের ভাই মো. হাফিজুর রহমান, দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালামের ছেলে তানভীর হাসান ও জেলা যুবলীগের সম্পাদকের স্ত্রী তাকছিনা নাজনীনকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে চারজনের নিয়োগের কথা থাকলেও ছয়জনকে নিয়োগের জন্য বাছাই করা হয়। ৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কথা থাকলেও ওই দিনই তাঁরা যোগ দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমার বসু প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমরা জানি না। এ বিষয়ে কোনো নোটিশও পাইনি। নোটিশ পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জানুয়ারি মাউশির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শাখা থেকে শিক্ষক সমিতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠানো হয়। পরে গত ২৮ জানুয়ারি ইউজিসি থেকে অফিস আদেশে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়। কমিটির অপর দুজন হলেন সদস্যসচিব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম শেখ এবং সদস্য অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপপরিচালক মো. আবদুল আলীম।