দুপুরের পর পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে, তবে ভোগান্তি নেই
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায়। আজ শুক্রবার সকালে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ স্বাভাবিক থাকলেও দুপুরের পর থেকে ঘাট এলাকায় তা বেড়ে গেছে। এর পাশাপাশি কোরবানির পশুবাহী গাড়িরও বাড়তি চাপ দেখা দিয়েছে।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ঈদে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহন এই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ হয়ে চলাচল করে থাকে। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এই নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমে এসেছে। ঈদে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার নদীতে পানি বাড়ায় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে পদ্মা নদীর অববাহিকায় তীব্র স্রোত রয়েছে। এ কারণে স্বাভাবিক সময় থেকে বর্তমানে ফেরি চলাচলে সময় বেশি লাগছে। স্বাভাবিক সময়ে পাটুরিয়া প্রান্ত থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে যেতে ফেরিগুলোর প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লাগে। এই স্রোতের প্রতিকূলে লঞ্চগুলোকে চলাচল করতে কিছুটা বেশি লাগছে। স্বাভাবিক অবস্থায় পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে যেতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে। তবে স্রোতের কারণে ফেরিগুলো প্রায় এক কিলোমিটার উজান দিয়ে চলায় এখন ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট লাগছে। এ ছাড়া নদীতে পানি বাড়ায় দুই পাড়ের ঘাটগুলোর পন্টুন মিড ওয়াটার লেভেলে (মধ্যম স্তর) ওঠানো হয়েছে।
এবার ঈদ উপলক্ষে এই নৌপথে ১৮টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। পাটুরিয়া প্রান্তে ৫টি ঘাটের মধ্যে তিনটি ঘাট সচল রয়েছে। পাটুরিয়ায় ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট দিয়ে ফেরিতে যানবাহন ও যাত্রী ফেরিতে ওঠানামা করছে। এ ছাড়া দৌলতদিয়া প্রান্তেও ৩, ৫ ও ৭ নম্বর এই তিনটি ঘাট সচল রয়েছে।
স্বাভাবিক অবস্থায় পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে যেতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে। তবে স্রোতের কারণে ফেরিগুলো প্রায় এক কিলোমিটার উজান দিয়ে চলায় এখন ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট লাগছে।
সরেজমিনে আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাটুরিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটে দেখা গেছে, ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে লোকাল বাসে করে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে পুরাতন ট্রাক টার্মিনালে আসছেন। এরপর প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে মালামাল নিয়ে যাত্রীরা পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে যাচ্ছেন। পরে টিকিট সংগ্রহ করে লঞ্চে গিয়ে উঠছেন যাত্রীরা। আবার যাত্রীদের কেউ কেউ ইজিবাইক, রিকশায় করে ফেরিঘাটে যাচ্ছেন। এরপর ফেরিতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পারাপার হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন। তবে ফেরির থেকে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বেশি দেখা গেছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে ৩৪টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পাটুরিয়ায় ২২টি ও আরিচায় ১২টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হবে। এ ছাড়া আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে যাত্রী পারাপারে ৪৮টি স্পিডবোট রয়েছে। তবে রাতের বেলায় লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে যাত্রীবাহী বাসগুলো ঘাট এলাকায় আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে এসব যাত্রীবাহী বাস পারাপার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত বিভিন্ন গাড়ি যেমন প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করেও যাত্রীদের অনেকে ঈদে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। এ কারণে এসব গাড়িরও চাপ রয়েছে ঘাট এলাকায়। তবে ভোগান্তি ছাড়াই এসব গাড়ি ফেরিতে নদী পারাপার হচ্ছে।
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আবদুল গণি (৪০)। আজ সকালে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি যেতে পাটুরিয়ার লঞ্চঘাটে আসেন। তিনি বলেন, ‘সারা বছর কাজ করতে হয়। শুধু বছরের দুটি ঈদে বাড়ি যাই। এবারও যাচ্ছি। তবে এবার সড়কে ও ঘাটে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি।’
বিকেল চারটার দিকে পাটুরিয়ার ৪ নম্বর ঘাট এলাকায় ফরিদপুরগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসের যাত্রী শাহাজাহান আলী (৫৫) বলেন, আগে ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হতো। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে এই ঘাটে এখন সেই দুর্ভোগ কমেছে। ঘাটে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁদের বাসটি ফেরিতে উঠেছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রায় আজ দুপুরের পর থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি থাকায় ঘাটে আসার পরপরই যাত্রী ও যানবাহন নৌপথ পারাপার হচ্ছে।