ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় নারীকে হত্যার পর মাথা বিচ্ছিন্ন করে খণ্ডিত দেহ পোড়ানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার ফারহান ভূঁইয়া ওরফে রনি (৩১) হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জহিরুল ইসলাম তাঁর জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আলিম জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীর বাজার এলাকা থেকে শারমিন বেগম ওরফে হরমুজা বেগম (৪৭) নামক এক নারীর পোড়া দেহ ও মাথা উদ্ধার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ফারহানকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে নিহত নারীর বড় মেয়ে রুমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন।
নিহত শারমিন বেগম উপজেলার হীরাপুর এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। গ্রেপ্তার ফারহান ভূঁইয়া আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন শাখা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে। তাঁদের বাড়ি রহিমপুর গ্রামে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া পলাতক। ঘটনার পর থেকে ফারহানের পরিবার গা ঢাকা দিয়েছে। আজ দুপুরে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন বলেন, নিহত শারমিন দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রহিমপুর গ্রামে বসবাস করতেন। তিনি ফারহানের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। ছোটবেলা থেকে ফারহানকে কোলে-পিঠে করে বড় করেছেন। বাড়িতে কাজ করার সুবাদে এবং ছোটবেলা থেকে লালনপালন করায় ফারহানকে প্রায়ই বিভিন্ন কারণে শাসন করতেন তিনি। বিষয়টি ভালোভাবে দেখতেন না ফারহান। এ নিয়ে ফারহানের মনে ক্ষোভ ছিল। ঘটনার আগের দিন সোমবার কোনো একটি বিষয় নিয়ে ফারহানকে শাসন করে শারমিন। এ কারণে তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরি দিয়ে মাথা বিচ্ছিন্ন করে মাথার খণ্ডিত অংশ মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখেন। পরে মাথাবিহীন দেহটি আগুনে পোড়ান।
মামলার বাদী রুমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর বাবা অসুস্থ বলে মাকে ডেকে নিয়ে যায় ফারহান। কিন্তু আমাদের ধারণা, ফারহান চুরি করা রাজহাঁস মাকে কেটে দিতে বলেছিল। কিন্তু মা সেটা করেনি। এ জন্যই আমার মায়ের গলা কেটে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে অঙ্গার করেছে। আমরা বেশি কিছু না, ফারহানের ফাঁসি চাই। ওদের বাড়ির ওর বাবাসহ সবার বিয়ে থেকে শুরু করে ফারহান ও তার ভাইবোনদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সবই আমার মায়ের হাত দিয়ে হয়েছে। তার প্রতিদান যে আমার মাকে এভাবে দিতে হবে, কোনো দিন ভাবিনি।’