মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি, কাস্টমস কর্মকর্তাকে আটকের পর ছেড়ে দিল পুলিশ
হবিগঞ্জ শহরে একটি বিপণিবিতানে ভ্যাটসংক্রান্ত মামলার ভয় দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ অনৈতিক অর্থ আদায়ের চেষ্টাকালে জেলা আঞ্চলিক কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের এক কর্মকর্তাকে আটক করে পুলিশে দেন ব্যবসায়ীরা। ঘটনাটি ঘটে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় শহরের ঘাটিয়া বাজার এলাকায়। কেউ কোনো অভিযোগ না দেওয়া সন্ধ্যার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ওই ভ্যাট কর্মকর্তার নাম শামীম আল মামুন। তিনি হবিগঞ্জ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিদর্শক। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁকে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় শামীম আর মামুনকে সন্ধ্যার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি আলমগীর কবির।
পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমস কর্মকর্তা শামীম আল মামুন সোমবার রাত ১১টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের ঘাটিয়াবাজার এলাকায় অবস্থিত এসডি প্লাজায় যান। প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান। এ সময় এসডি প্লাজার স্বত্বাধিকারী শঙ্কর দাস প্রতিষ্ঠানে ছিলেন না। তাঁর ছেলে শুভ দাস ছিলেন ওই সময়। ভ্যাট কর্মকর্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে ভ্যাটের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে হয়রানি শুরু করেন। একপর্যায়ে শুভ দাসকে মামলার ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ নিয়ে কর্মকর্তা শামীম আল মামুনের সঙ্গে শুভ দাসের তর্কতর্কি শুরু হয়। এ সময় দোকানে থাকা ক্রেতারা প্রতিবাদ করেন ভ্যাট কর্মকর্তার আচরণে। বিষয়টি নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে সেখানে আশপাশের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও পথচারীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। একপর্যায়ে আটক করা হয় ওই ভ্যাট পরিদর্শক শামীম আল মামুনকে। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় উত্তেজিত জনতা ভুয়া, ভুয়া স্লোগান দিয়ে মারধরের চেষ্টা করেন ভ্যাট কর্মকর্তাকে। পরে পুলিশ পিকআপ ভ্যানে করে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়ে আসে ওই কর্মকর্তাকে। আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত ওই কর্মকর্তা থানায় আটক ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
এসডি প্লাজা দোকানমালিকের ছেলে শুভ দাস জানান, ভ্যাট পরিদর্শক শামীম আল মামুন এক সপ্তাহ আগে এসডি প্লাজায় একা আসেন। একইভাবে কাগজপত্র খতিয়ে দেখার নামে তাঁদের হয়রানি করেন। হুমকি দিয়ে যান, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন। তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় আবার এসে একইভাবে হয়রানি করতে থাকেন। একপর্যায়ে মামলার ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ভ্যাট পরিদর্শকের আচরণ সন্দেহ হওয়ায় দোকানের ক্রেতারা তাঁকে আটক করেন। পরে এলাকবাসী তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করে।
এদিকে হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন, আটক হওয়া ভ্যাট পরিদর্শক শামীম আল মামুন দুই-তিন দিন আগে একইভাবে শহরের অন্যতম রেস্তোরাঁ আইযুব আলী রেস্টুরেন্ট, মধু কানন, আলম ফ্রুটসসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে রাত ১১টার পর উপস্থিত হয়ে ভ্যাটসংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে হয়রানি করছিলেন। মামলার ভয় দেখিয়ে অনৈতিকভবে অর্থ আদায় করেন। এ কর্মকর্তা হবিগঞ্জে যোগদানের পর থেকে ব্যবসাীয়দের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) এ এন এম সাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটিয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী এ ভ্যাট পরিদর্শককে আটক করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এখনো তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।