রাঙামাটির পর্যটন খাতে বাড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ। গত ১০ বছরে জেলায় বেসরকারি বিনিয়োগ শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও সরকারিভাবে পর্যটন খাতের তেমন উন্নয়ন হয়নি। জেলার বেসরকারি উদ্যোক্তা ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৪ সালে রাঙামাটি সদর উপজেলার আসাম বস্তি-কাপ্তাই সড়কের বড়াদম এলাকায় দুটি কটেজ ও রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘বড় গাঙ’। এরপর একই এলাকায় গড়ে ওঠে বেরান্নে রেস্টুরেন্ট, ইজোর, মায়াবী, রাঙা বেজক্যাম্প, বার্গী লেক ভ্যালি, রেঙ লেক বিচ, আইল্যান্ড রিসোর্ট, রাঙা দ্বীপ রিপোর্টসহ ১৫ থেকে ২০টি রেস্টুরেন্ট-রিসোর্ট। কাপ্তাই হ্রদের পাড় ও দ্বীপে গড়ে তোলা এসব রিসোর্ট-রেস্টুরেন্টে ৫০-৬০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে রুইলুই ভ্যালিতে ২০১৫ সাল থেকে রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত অন্তত ১১৫টি রিসোর্ট-কটেজ গড়ে উঠেছে। এসব রিসোর্ট-কটেজসহ সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা।
উদ্যোক্তারা জানান, এখনো অনেক উদ্যোক্তা রাঙামাটির পর্যটন খাতে ব্যয় করতে ইচ্ছুক। তবে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঝুঁকি থাকায় তাঁরা উৎসাহ পাচ্ছেন না। রাঙামাটির নীলাঞ্জনা হাউসবোট ও রিসোর্টের মালিক দীপাঞ্জন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে রিসোর্ট, কটেজ, হাউসবোটসহ পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু ব্যাংকঋণসহ সরকারি সহায়তা তেমন মিলছে না। ব্যাংকঋণসহ সরকারি সহায়তা পেলে রাঙামাটির পর্যটন খাত অনেক এগিয়ে যাবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকও বাড়বে।’
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে আমাদের ১১৫টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। এসব রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি, রেস্টুরেন্ট ও জমি কেনায় ব্যয় হয়েছে আরও ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা।’
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকায় ১৯৭৯ সালে ২৬ একর জমিতে পর্যটন করপোরেশনের যাত্রা শুরু করা হয়। সেখানে একটি পর্যটন কমপ্লেক্স ও ছয়টি কটেজ নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৬ সালে পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায় কাপ্তাই হ্রদে দুই দ্বীপের মাঝখানে নির্মাণ করা হয় ঝুলন্ত সেতু। এরপর দীর্ঘদিন পর্যটন করপোরেশনের কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। তবে সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১৩ কোটি টাকার একটি পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলক বিকাশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ২০১৪ সালে ১৩ কোটি টাকার একটি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। তবে ভবিষ্যতে উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা রয়েছে।’
পার্বত্য চুক্তির আলোকে ২০১৪ সালে পর্যটন খাতকে জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু হস্তান্তরের পর জেলা পরিষদ পর্যটনের উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি বলে মত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। যদিও প্রতিবছর জেলা পরিষদ পর্যটন খাতে ৬০ থেকে ৯০ লাখ টাকা বাজেট ঘোষণা করে আসছে। বাজেটের এসব অর্থ শুধু আলোচনা সভা ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শেষ হচ্ছে। তবে ২০১৪ সালে রাঙামাটিতে পর্যটনের উন্নয়নে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটির ডিপিপি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৪ সালে রাঙামাটিতে পর্যটনের উন্নয়নে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটির ডিপিপি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
জেলা পরিষদ নিজস্ব আয় থেকে সাজেকে একটি রিসোর্ট করেছে ও রাঙামাটি শহরে ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জানতে চাইলে জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরনেন্দু ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটনের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ২০০ কোটির একটি প্রকল্প পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্প কী অবস্থায় আছে, তা এখন জানা যাচ্ছে না। তবে জেলা পরিষদ সাজেকে একটি রিসোর্ট নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরে একটি প্রকল্প চলমান।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যটনে সরকারিভাবে বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। যদিও বেসরকারি উদ্যোক্তার আমাদের হিসাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। আমরা আরও বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা, ঋণ এবং নিরাপত্তার অভাবে অনেকে বিনিয়োগ করছেন না। আমরা চাই, রাঙামাটির পর্যটন খাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে আরও বিনিয়োগ করা হোক। এতে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’