মনপুরায় চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদে জামায়াত–ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভে হামলার অভিযোগ
ভোলার মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদে মিছিলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় ৯ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায়। প্রতিবাদ মিছিলটি বের করেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা।
তবে এ ঘটনাকে বিএনপি এবং জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হিসেবে উল্লেখ করে মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান কবির বলেছেন, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবাইকে ডেকেছেন সমঝোতার জন্য।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ভিজিএফের চালের বেশির ভাগ বরাদ্দ বিএনপি ও প্রশাসন ভাগ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁদের ওপর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালান। হামলায় বাজারে আসা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে নৌবাহিনী ও পুলিশের নিয়মিত টহল দল দ্রুত এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে আবার চাল বিতরণ করে।
আহত মো. কাওসার, মো. রাসেল ও রাশেদুল ইসলামকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আহত আবুল কাশেম, রাকিবুল ইসলাম, মো. হুমায়ুন কবীর, মো. নোমান ও মো. মাহিমকে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জামায়াতের মনপুরা উপজেলা আমির মাওলানা জসিম উদ্দিন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনপুরা উপজেলার সভাপতি মুফতি এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের প্রশাসক নাছির উদ্দিন ভিজিএফের চালসহ সব ধরনের বরাদ্দ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করে আসছেন। আজ ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল এসেছে ১ হাজার ৫২০ জনের নামে। এর মধ্যে জামায়াতের ১০০ জনকে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫০ জনকে কার্ড বিতরণ করেছে। বাকি ১ হাজার ৩৭০টি কার্ড বিএনপি ও প্রশাসন ভাগ করে নিয়েছে। এর প্রতিবাদে রোববার বেলা ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ সময় বিএনপির কর্মীরা অতর্কিত হামলা করে ৯ জনকে পিটিয়ে আহত করেছেন। এ ঘটনায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান জসিম উদ্দিন।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসককে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ কারণে আমাদের কর্মীরা বাধা দিয়েছে।’
এমন অভিযোগের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের উপজেলার সভাপতি এনায়েতউল্লাহ বলেন, তাঁরা ইউনিয়নের প্রশাসকের কাছে অনিয়মের কারণটি জানতে চেয়েছেন মাত্র, কাউকে তুলে নেওয়ার জন্য ডাকা হয়নি।
উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্ব থাকা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে ১ হাজার ৫২০ জনের জন্য ১০ কেজি করে ১৫ টন ২০০ কেজি চাল এসেছে। এ চালের কার্ড ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা বণ্টন করেছেন। তাঁরাই মূলত দুস্থদের মধ্যে বণ্টন করেছেন। এখানে তিনি শুধু দেখেছেন প্রকৃত দুস্থরা পেয়েছেন কি না, সে কোন দলের এটা দেখা হয়নি। কিন্তু দলীয় নেতারা বলছেন, সব বিএনপিকে দেওয়া হয়েছে। এটা সত্য নয়।’