জাতীয় পার্টি ছাড়া কোনো নির্বাচন বাংলার মাটিতে হবে না: মোস্তাফিজার

রংপুরে জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান ও সিটির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান। শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেছেন, ‘আজ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাঁরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন, তাঁদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দেওয়ার সময় এসেছে। রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি, রংপুর জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব, রংপুরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শায়িত আছেন। দরকার হলে আমরা আমাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জেলা, মহানগর ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে যৌথ কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফিজার রহমান এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘রংপুর আন্দোলনের সূতিকাগার। নুরলদীন বলে গেছেন, “জাগো বাহে কোনঠে সবায়”। রংপুর সেই নুরলদীনের মাটি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে টার্নিং পয়েন্ট হলো রংপুরের আবু সাঈদের আত্মত্যাগ।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের উদ্দেশে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আপনারা বলেছেন, “যে পথে গেছে আপা, সেই পথে যাবে জাপা”। আমি আপনাদের উদ্দেশে বলতে চাই, “কত সাবান এল গেল, তিব্বত সাবান রয়ে গেল”। জাতীয় পার্টির ইতিহাস ৪২ বছরের ইতিহাস। জাতীয় পার্টির ইতিহাস ৯ বছর সুশাসন দিয়ে পরিচালনা করার ইতিহাস। জাতীয় পার্টির ইতিহাস ৪৬০টি উপজেলা করার ইতিহাস। জাতীয় পার্টির ইতিহাস ৬৪টি জেলা করার ইতিহাস। সব ভুলে গেছেন, ভুলে যাবেন না। আবার গর্জে উঠবে রংপুর। আপনাদের মসনদ উল্টে দেওয়ার জন্য জাতীয় পার্টি প্রস্তুত।’ সারজিস আলমের উদ্দেশে মোস্তাফিজার রহমান আরও বলেন, ‘আপনি বলে গেছেন, “পিপীলিকার পাখা হয় মরিবার তরে”। আমরা পিপীলিকা নই, আমরা বাজপাখি।’

গণ অধিকার পরিষদ ও এই দলের সভাপতি নুরুল হক নুরের উদ্দেশে জাপার এই নেতা বলেন, ‘নুর সাহেবের দল, এটা একটা পরগাছা। একটা জায়গায় বিএনপি চিঠি দিয়েছে, উনি (নুর) এক জায়গায় সমাবেশ করবেন, আপনারা সহযোগিতা করেন। তার মানে, এঁদের নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলে সময় নষ্ট করার সময় নেই।’ নুরুল হকের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আজ জিলা স্কুলের সমাবেশে উনি (নুর) আমাদের উদ্দেশে বলেছেন, মেয়র চাঁদাবাজ, মেয়র দুর্নীতিবাজ। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, সাহস থাকলে সামনে এসে বলেন, দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য জাতীয় পার্টি প্রস্তুত আছে এবং থাকবে।’

জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে নেতা–কর্মীদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান মোস্তাফিজার রহমান। শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রংপুরের সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। জাতীয় পার্টি ছাড়া কোনো নির্বাচন বাংলার মাটিতে হবে না। জাতীয় পার্টিকে ডাকতে হবে।’ রংপুরের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জাপার এই নেতা আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সম্পর্কে যে কথা বলেছেন, আপনাদের এ কথা প্রত্যাহার করতে হবে। আপনারা কদিন রংপুরে থাকেন, সেটা আমরা দেখব ইনশা আল্লাহ।’

ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও খুলনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আপনারা চোরের মতো আগুন দিয়েছেন। রংপুরে জাতীয় পার্টির অফিস আছে, এখানে আসেন, দেখা হবে ইনশা আল্লাহ। তাঁদের জানান দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’

জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘যখনই ডাক আসবে, আমাদের রংপুর ঘেরাও কর্মসূচি হবে। ডিসি অফিস ঘেরাও হবে। বিভাগীয় কমিশনার অফিস ঘেরাও হবে। পুলিশ অফিস ঘেরাও হবে। জাতীয় পার্টি আছে, জাতীয় পার্টি থাকবে।’ জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার ষড়যন্ত্র হলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

যৌথ কর্মী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগর জাপার সদস্যসচিব এস এস ইয়াসীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা জাপার সহসভাপতি জাহেদুল ইসলাম।

এদিকে সমাবেশ শুরুর আগে বেলা তিনটা থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সিটির ৩৩টি ওয়ার্ড ও ৮টি উপজেলা থেকে মিছিল সমাবেশস্থলে আসে। বিকেল চারটায় সমাবেশ শুরু হয়ে সন্ধ্যায় শেষ হয়। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।