সিলেটে মধ্যরাতে পুলিশ মেসে মেসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন চেক করছে
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেসে মেসে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের হয়রানির পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও উঠেছে। এ ছাড়া কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে আটকও করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৫ জনকে আটক করার তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ১৮ জুলাইয়ের পর তল্লাশির নামে পুলিশি হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই চলছে বলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, কোনো শিক্ষার্থীকেই হয়রানি করা হচ্ছে না।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে টিলারগাঁও, আখালিয়া, সুরমা আবাসিক এলাকা, লেকসিটি, নয়াবাজার, তেমুখী, কালীবাড়ি, তপোবন আবাসিক এলাকা, মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, নেহারিপাড়াসহ কিছু এলাকায় কয়েক শ মেস আছে। এসব মেসে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো সাধারণ শিক্ষার্থী থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি–ইচ্ছুক ও চাকরিপ্রত্যাশী অনেক শিক্ষার্থীও এসব এলাকায় বসবাস করেন। গভীর রাতে পুলিশ এসব মেসে গিয়ে তল্লাশি চালায়। এতে হয়রানি এড়াতে অনেক শিক্ষার্থী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
গতকাল বুধবার মধ্যরাতেও পুলিশ একাধিক মেসে তল্লাশি চালিয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলেন, তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশ গতকাল দুজন শিক্ষার্থীকে সুবিদবাজার এলাকার এক মেস থেকে আটক করেছে। এর মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী, অন্যজন সাবেক। আটকদের ছাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক মহানগরের কোতোয়ালি থানায় যান।
এদিকে মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হবে।
টিলারগাঁও এলাকার একটি মেসে থাকেন, এমন একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুলিশ তাঁর মেসেও গতকাল রাতে তল্লাশি চালিয়েছে। তাঁর একাধিক সহপাঠীর মেসেও তল্লাশি চালিয়েছে। অথচ সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তবু পুলিশ ভয় দেখাতে মধ্যরাতে তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশি হয়রানি এড়াতে অনেকে মেস ছেড়ে অন্য জায়গায় থাকছেন। এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পুলিশ তল্লাশির নামে মধ্যরাতে মেসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে মুঠোফোন চেক করে। ফেসবুকে কে কোন পোস্ট দিলেন কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে কী বার্তা দিলেন, সেসব পুলিশ চেক করছে। এ ছাড়া গ্যালারিতে কী ধরনের ছবি আছে, তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। একের পর এক জেরা আর প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশি তল্লাশির মুখোমুখি হয়েছেন, এমন দুজন শিক্ষার্থী নিজেদের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, একেকটা দলে কমবেশি ২০ থেকে ৩০ জন পুলিশ সদস্য থাকেন। জেরার সময় শিক্ষার্থীরা কে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েন, তা নিশ্চিত হতে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখতে চান তাঁরা। কাউকে কাউকে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছেন তল্লাশির সঙ্গে যুক্ত পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের একজন ফয়সাল হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তল্লাশির নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে পুলিশ বক্স জ্বালানো-পোড়ানোসহ নানা সহিংসতার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, ছবি ও ভিডিও দেখে সুনির্দিষ্টভাবে কেবল তাঁদেরই পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। নাশকতাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। নিরীহ শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল রাতে পুলিশ দুজন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, একজন ২০১৯ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন, অন্যজন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী। যিনি আমাদের শিক্ষার্থী, তাঁর পরিচয়সহ যাবতীয় তথ্য পুলিশকে আমরা পাঠিয়েছি, পুলিশ বিষয়টি বিশেষভাবে যাচাই–বাছাই করে দেখছে। নিরীহ কোনো শিক্ষার্থীকে যেন অহেতুক হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেটা পুলিশকে আমরা জানিয়েছি।’