কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর আবারও আজ দুপুরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, ইটপাটকেল নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালায়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বঙ্গবন্ধু হল এলাকা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনার পর বিকেলে বৈঠক করে আগামী রোববার ও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির একটি স্থায়ী সমাধান করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছেন। পরবর্তী সময়ে হল প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোররাত ৪টা পর্যন্ত দুই হলের মধ্যবর্তী স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও গতকাল জুমার নামাজে দুই হলের দুই ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা আড়াইটার দিকে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পেয়ে ধাওয়া দেন বঙ্গবন্ধু হলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে হকিস্টিক, বাঁশ, রড ও ইটের টুকরা ছিল। বঙ্গবন্ধু হলের নেতা-কর্মীরা প্রধান ফটক থেকে ধাওয়া দেওয়া শুরু করেন।
এরপর উপাচার্যের বাসভবন, নওয়াব ফয়জুন্নেছা ছাত্রী হল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল ও বঙ্গবন্ধু হল পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এ সময় এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর কিলঘুষি, লাথি, লাঠিপেটা—সবই করে। সংঘর্ষে নজরুল হল ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হাসান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিদ আহমেদকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রধান ফটক থেকে বঙ্গবন্ধু হল পর্যন্ত সড়কে শত শত ইটের টুকরা, কাঠের গুঁড়ি দেখা গেছে। এ সময়ে আতঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম ওরফে মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবারের ঘটনা আমি নিজে দেখেছি। আজ বিকেলে খবর পেয়ে প্রধান ফটকের সামনে যাই। সেখানকারও ঘটনাও দেখেছি। এ নিয়ে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল দুপুরে কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থী আশরাফুল রায়হান নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু হলের সামনে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদকে সাইড দিতে বলেন। এ সময় সেলিমের সঙ্গে আশরাফুলের ধাক্কা লাগে। নামাজ শেষে এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে নজরুল হল ছাত্রলীগের কর্মী ফাহিমের ওপর অতর্কিত হামলা করে বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ কর্মী আকরাম, সালাউদ্দিনসহ কয়েকজন। এরপর রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলের সামনের দোকানে নজরুল হল ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী খাবার খেতে গেলে আবার কথা-কাটাকাটি হয়। সেই থেকে দুই হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টির ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।
বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাসার দাবি করেন, ‘আমি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম। যতটুকু শুনেছি, দুই হলের শিক্ষার্থীরা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সংগঠন থেকে নেওয়া হবে।’
নজরুল হল ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হলের ছেলেরা আমাদের হলে এসে হামলা চালায়। আমি হলের সবাইকে ভেতরে রাখার চেষ্টা করেছি। আমরা হামলার বিচার চাই।’