মাগুরায় বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগের হামলা, শহরে অস্ত্রের মহড়া
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মাগুরায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে শহরের ভায়নার মোড়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় মোট পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া হামলার আগে ও পরে প্রকাশ্যে শহরে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে পৌর ও সদর থানা বিএনপি। বেলা তিনটার দিকে ভায়নার মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে চলা ওই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর। তার আগেই ভায়না মোড়ের দিক থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে সমাবেশে হামলা চালায়।
বিএনপি নেতাদের দাবি, হামলার সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হাতে চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, রামদা, রডসহ কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এ সময় ৩০টির বেশি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির সমাবেশে হামলা চালালে পুলিশ দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মহাসড়কে এবং বিএনপির নেতা-কর্মীরা সদর উপজেলা পরিষদের পাশের গলিতে অবস্থান নেন। এ সময় উভয় পক্ষ ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করলে মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আধা ঘণ্টার বেশি সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। সংঘর্ষের সময় বিএনপির কার্যালয়সহ আশপাশের কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সংঘর্ষের সময় ‘দৈনিক সত্যপাঠ’ নামের একটি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মো. মিলন শরীফের একটি মোটরসাইকেলসহ মোট পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। সাংবাদিক মিলন শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিএনপির সমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে যাই। সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় মোটরসাইকেলটি সরাতে পারিনি। গণমাধ্যমের স্টিকার লাগানো থাকলেও ভায়নার দিক দিয়ে আসা দলটির কয়েকজন আমার মোটরসাইকেলে আগুন দেয়।’
ঘটনাস্থল থেকে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো কর্মসূচির তথ্য তাঁদের কাছে ছিল না। তবে সংঘর্ষ হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এ জন্য পুলিশের প্রস্তুতিও ছিল। দুই দিক থেকে দুটি মিছিল এসে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ মাঝখানে থেকে দুই দলকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাবেশ ঘিরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা দিনভর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া করেছে। আর সমাবেশে তো পুলিশের সামনেই বোমাবাজি, রামদা, ছ্যানদা নিয়ে হামলা করেছে। অথচ প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই পুলিশের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সমাবেশ শুরু হয়।’
এদিকে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের আগে ও পরে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে শহরে মিছিল করতে দেখা গেছে। এতে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই মিছিলের ছবি তুলতে গেলে যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি আবু বাসার আখন্দ ও প্রথম আলোর কাজী আশিক রহমানের ক্যামেরা ভাঙচুর ও হামলার হুমকি দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাগুরা কলেজ রোডের এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, মারামারির আগে দুই দল গেছে চৌরঙ্গী থেকে ভায়নার দিকে। তাঁদের প্রায় সবার হাতেই অস্ত্র ছিল। বিশেষ করে মারামারির পরে ভায়নার মোড় থেকে চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে আওয়ামী লীগের বিশাল একটি মিছিল আসে। সেই মিছিলে অধিকাংশ লোকের হাতে রামদা, ছ্যানদা, চাপাতি, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন অস্ত্র ছিল।
বিএনপির সমাবেশে হামলা ও শহরে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শ্রীপুরে দলীয় একটি সমাবেশে ছিলাম। সেখান থেকেই সংঘর্ষের খবর পাই। ঘটনা কী ঘটেছে স্পষ্ট জানি না। তবে শুনেছি, আমাদের নেতা-কর্মীদের একটি মিছিল ভায়নার মোড় দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়েছেন। শহরে অস্ত্র হাতে কোনো মিছিলের তথ্য জানি না।’
জানতে চাইলে মাগুরার পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি।