কোটা বাতিলের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

কোটাপদ্ধতি বাতিল, মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল, মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক-সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা, যা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে চারটা) চলমান ছিল। এ সময় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। একই দাবিতে গতকাল রোববার দুই ঘণ্টা, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ৩৫ মিনিট ও বুধবার পৌনে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া গত সোমবার ১০ মিনিট ও গত মঙ্গলবার ২০ মিনিট সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

আজ বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো ২০১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন অযৌক্তিক। তবে আন্দোলন অযৌক্তিক নয়; বরং সরকারি চাকরিতে কোটা থাকা অযৌক্তিক, যা মেধাবীদের বঞ্চিত করে। সংবিধানে সমতা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও কোটাপ্রথা মূলত বৈষম্য তৈরি করছে। তাই আমরা কোটার প্রথার সংস্কার চাচ্ছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিল, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে একটি কুচক্রী মহল বারবার বলার চেষ্টা করছে বা অপপ্রচার চালাচ্ছে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে নাকি জামায়াত-বিএনপি ভর করেছে। এটা মিথ্যা, ভিত্তিহীন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধের বিষয়টি জেনেছি। তবে যেহেতু দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে। সেহেতু আমি নৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে পারি না। আমরা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য বলেছি।’