দেয়ালে লিখে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ, ‘হামার বেটাক মারলু কেনে?’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে শিক্ষার্থীদের দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি। রোববার সন্ধ্যায়ছবি: আনিস মাহমুদ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদ, মামলা প্রত্যাহার, গুম-আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও হল-ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবিতে সিলেটে দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার বিকেল পাঁচটা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ কর্মসূচি শুরু করা হয়।

১৮ জুলাই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় পুলিশের ধাওয়ায় খালের পানিতে ডুবে মারা যান কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলার পাহাড়পুরে। বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন সুরমা আবাসিক এলাকায় থাকতেন রুদ্র।

আজকের কর্মসূচিতে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্লু বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর আগে বিকেল সোয়া চারটা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জড়ো হতে থাকেন। নিজেদের সংগৃহীত সাত থেকে আট হাজার টাকা দিয়ে রংতুলি কিনে তাঁরা গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়কের মধ্যেও বিভিন্ন স্লোগান লেখেন
ছবি: আনিস মাহমুদ

শিক্ষার্থীদের দেয়াললিখনের মধ্যে ছিল ‘হামার বেটাক মারলু কেনে?’ ‘ছাত্র যদি ভয় পাইতো বন্দুকের গুলি, উর্দু থাকতো রাষ্ট্রভাষা, উর্দু থাকতো বুলি’, ‘দেশ স্বাধীন হলে আমরা আবার ছাদে উঠব’, ‘তুমি কে আমি কে, বিকল্প বিকল্প’, ‘লোহার টুপি মানুষের মগজ খায়’, ‘মেধা শহীদ’, ‘আমি মেট্রোরেল হতে চেয়েছিলাম, খোদা আমাকে ছাত্র বানালো’ প্রভৃতি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন দেখিনি; একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যা দেখিনি। কিন্তু এগুলো সব সময় আমাদের প্রতিবাদী চেতনার জন্ম দেয়। এবার আমরাও ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। আমরা চব্বিশ (২০২৪) দেখেছি। দেয়ালে, সড়কে গ্রাফিতির মাধ্যমে চব্বিশকে পৃথিবীব্যাপী জানিয়ে দিতে চাই। এটিও আমাদের প্রতিবাদের ভাষা।’

শিক্ষার্থীদের দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি। রোববার বিকেলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে
ছবি: আনিস মাহমুদ

দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচিতে দেয়াল লিখছিলেন মদন মোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন। লিখেছেন, ‘রক্ত দেখলে বাড়ছে সাহস।’ জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, ‘সরকারপন্থীরা আমাদের মেরে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে। আমরা এই লেখার মাধ্যমে বোঝাতে চাই, যতই মেরে ফেলা হোক আমাদের সাহস আরও দ্বিগুণ হবে।’

ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘১৮ তারিখ থেকে আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, অনেককে প্রতিবন্ধী করা হয়েছে। নিহত আবু সাঈদের বোনের ভাষাসহ বিভিন্ন প্রতিবাদী ভাষাকে আমরা দেয়াললিখন ও গ্রাফিতিতে তুলে ধরছি।’

‘রুদ্র নেই, আমাদের সব শেষ’

রুদ্র সেন
ছবি: সংগৃহীত

রুদ্রের বড় বোন সুস্মিতা সেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো ভাবি সে (রুদ্র) সিলেটেই আছে। বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকত। পূজায় আসত। আমাদের ঘরে যেন আলো ফিরে আসত। আজ রুদ্র নেই, আমাদের সবই শেষ হয়ে গেল।’

তিনি বলেন, রুদ্র ছিল শান্ত প্রকৃতির। কোনো রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে যেত না। কোটা আন্দোলনে সহপাঠীরা সবাই যাচ্ছেন দেখে মনে করেছিল, তাঁরও যাওয়া উচিত। কিন্তু এভাবে একেবারেই চলে যাবে, কখনো ভাবতে পারছেন না। তাঁর মৃত্যুতে মা-বাবা নির্বাক হয়ে গেছেন।

হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের দেয়াললিখন
ছবি: আনিস মাহমুদ

রুদ্রের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নাম তাঁর নামকরণ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে রুদ্র সেন শহীদ হয়েছেন। আমরা তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নামকরণ করেছি শহীদ রুদ্র তোরণ।’

আরও পড়ুন