যশোরে শাহীন চাকলাদারের হোটেলের অগ্নিকাণ্ডে মৃত বেড়ে ২৪
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। অগ্নিদগ্ধ ২৩ জনকে উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
আটকে পড়া লোকজনের মধ্য থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার গিয়ে হোটেলের ছাদ থেকে একজন ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল চারতলা থেকে আরেকজনকে উদ্ধার করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার একজন নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই আন্দোলনকারী।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়ার পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে যশোর শহরে মিছিল বের করেন ছাত্র-জনতা। ওই মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন চিত্রা মোড়ে অবস্থিত হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় পেট্রল ঢেলে ১৬তলা হোটেলের বিভিন্ন তলায় আগুন ধরিয়ে দেন। বিকেল চারটায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে যান। ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার গিয়ে হোটেলের ছাদ থেকে একজনকে ও ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ গাড়ি গিয়ে চারতলা থেকে আরেকজনকে উদ্ধার করে। অগ্নিদগ্ধ ২৪ জনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের ঢাকা ও খুলনায় স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। এ ছাড়া ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়েন মো. সাকিব (১৭) নামে আইসক্রিম কারখানার এক কর্মী। তাঁকে প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় পাঠানো হয়।
সাকিবের বাবা আলাল উদ্দীন বলেন, বিজয় মিছিলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে জাবির হোটেলে ওঠে। আগুন দেখে নামতে গিয়ে দেখে সিঁড়িতে ধোঁয়া। কিছুই দেখতে পাইনি। তখন চারতলা থেকে নিচে লাফ দেয় সে। এর মধ্যে তার মুখমণ্ডল, হাতের আঙুল ও দুই ঊরু পুড়ে গেছে। তাকে ঢাকায় ভর্তি করা হয়েছে।
যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা বলেন, বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কীভাবে আগুন লাগল বা কী পরিমাণ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত ছাড়া এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে তৃতীয় তলায় প্রচুর অ্যালকোহল ছিল। সেই কারণে আগুন দ্রুত ছড়াতে পারে। তবে আগুনের ধর্ম হচ্ছে ফাঁকা জায়গা পেলেই ওপরের দিকে উঠতে থাকে। সিঁড়ি ফাঁকা ছিল বলে দ্রুত ছড়িয়েছে। নিচে নামার পথে আগুন থাকায় হতাহত বেশি হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে পুড়ে যাওয়া হোটেল জাবিরে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতার ভিড়। শহরের বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দা ও রিকশা-ইজিবাইক চালকেরা হোটেলের ভেতরে গিয়ে যে যা পাচ্ছেন ভেঙে চুরে নিয়ে যাচ্ছেন। হোটেলের ভেতরে থাকা পোড়া অর্ধপোড়া আসবাব থেকে শুরু করে টেলিভিশন, কম্পিউটার, ফ্রিজ, এসি, পানির মোটর, বিলাসবহুল জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। বাধা দেওয়ার মতো কেউ সেখানে নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। অন্য ২৩ জনকে ঢাকা ও খুলনায় পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। ওই নাগরিকের বিষয়ে ইন্দোনেশিয়া দূতাবাস থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।